‘চাঁদপুর ভরপুর জলে আর স্থলে- মাটির মানুষ আর সোনার ফসলে’। চাঁদপুর থেকে প্রাকাশিত সাপ্তাহিক ‘অন্যগ্রাম’ পত্রিকার স্থায়ী শিরোনাম ছিলো এটি। কবি ইদ্রিস মজুমদারের লেখা কবিতার এ চরণ দুটি সত্য প্রমাণিত করে চলেছে রত্মগর্ভা চাঁদপুর। ইতিহাসের নানা পাতায় এই জেলা তার গর্ভে ধারণ করেছে বহু সোনার মানুষ। যারা রাজনীতি, শিক্ষা-সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রেই চাঁদপুর তথা গোটা বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন।
সম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরের রাজনীতিতে সোনার মানুষের অভাব না থাকলেও কিছুটা অভাব আছে এক পক্ষের সাথে অন্য পক্ষের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির। কখনো আবার চিরায়ত রাজনৈতিক ম‚ল্যবোধ ও আদর্শের কিছুটা অভাবও দেখা যায়। জাতীয় রাজনীতির মতো এখানকার রাজনীতির মাঠেও বড় দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের এক টেবিলে বসা তো দ‚রে থাক কারো কারো বেলায় একে অন্যের সাথে মুখ দেখাদেখি বন্ধ রয়েছে অনেক দিন। নির্বাচনগুলোতে এক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক কর্তৃক অপর প্রার্থীর ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে, বিবাদে জড়ানো অহরহ ঘটেছে।
বর্তমানে রাজনীতি যতোটা না প্রতিযোগিতার, তার চেয়ে বেশি প্রতিহিংসায় প্রত্যাবর্তন করছে। যার ফলে রাজনীতি নিয়ে সমাজ আর মানুষের মনে আশার বদলে বৃদ্ধি পাচ্ছে হতাশা ও আশংকা।
তবে আশার কথা হলো সম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরের রাজনীতির মাঠে আবারো বইতে শুরু করেছে সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির সুবাতাস। এই সুবাতাসের উৎপত্তিস্থল চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন। আর এই সৌহার্দ-সম্প্রীতির অগ্রগণ্য জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নৌকার প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা সাধারণত উধারতা কম দেখান। প্রধান দুটি দলের প্রার্থীর মাঝে এমন সৌহার্দ-সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধা নিকট অতীতে তেমন দেখা মেলেনি। বহুল প্রত্যাশিত এই নির্বাচনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে বলেই আজকের সুন্দর পরিবেশ।
চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের কর্মীদের মাঝে হট্টগোল বাধে। এই ঘটনায় দুই পক্ষের সমর্থকদের বেশ কয়েকজন আহত হয়। বিষয়টি অবগত হবার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী সবেক ছাত্রনেতা অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল ছুটে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হন। সেখানে উপস্থিত নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের ধমক দিয়ে স্থান ত্যাগ করতে বলেন। তিনি ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝিকে সাথে নিয়েই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে বের হন এবং দীর্ঘপথ তাকে এগিয়ে দেন। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সাথে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর এমন সৌহার্দ্যপ‚র্ণ আচরণের দ্যৃশ্য গণমাধ্যম ও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা জেলাবাসীকে মুগ্ধ করে।
:দ্বিতীয় ঘটনাটি পরের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর:
নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল একটি উঠোন বৈঠকে যাবার পথে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের উপরে এবং সামনে সাঁটানো নিজের ব্যানার দেখে থমকে দাঁড়ান। নৌকা প্রতীকের এই ব্যানারের জন্যে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বা তার দল যাতে বিব্রতকর অবস্থায় না পড়ে সে জন্যে তিনি নিজের হাতে ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলেন। যা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের থেকেও প্রশংসিত হয়।
২৭ সেপ্টেম্বর আচমকা আক্তার মাঝির নির্বাচন কার্যালয়ে হাজির হন জিল্লুর রহমান জুয়েল। তাঁর এমন উপস্থিতি দেখে অবাক হন বিএনপি প্রার্থীসহ দলীয় নেতারা। তবে আতিথেয়তায় বিন্দুমাত্র কার্পণ্য দেখাননি তারাও। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি। এবং দুজন একসাথে খাবার খান। সাবেক দুই ছাত্রনেতার এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ দৃশ্যটি পৌরবাসীকে মুগ্ধ করে।
সবশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর শহরের ষোলঘর এলাকায় চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অন্যতম কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েলের বাড়ি ও কার্যালয়ের সামনে নৌকা প্রতীকের ব্যানার সাঁটাতে যায় অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েলের সমর্থকরা। সেখানে উপস্থিত সাবেক ছাত্রনেতা কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থীর ব্যানার লাগাতে সহযোগিতা করেন। যা দেখে উপস্থিত নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা মুগ্ধ হন।
এবিষয়ে জনপ্রিয় ছাত্রনেতা কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল বলেন, যেহেতু এই নির্বাচনটি দলীয় প্রার্থীতায় হচ্ছে, তাই এটি এক অর্থে দলীয় নির্বাচন। তবে নির্বাচন শেষে বিজয়ী প্রার্থী কিন্তু দলমত নির্বিশেষে গোটা পৌরবাসীর অভিভাবক বা মেয়র। তাই নির্বাচনে আমাদের সকল দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, শিষ্টাচার এবং সম্প্রীতি থাকাটা আবশ্যক।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেনি। কারণ অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন ছাত্রনেতা। সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তাঁর বক্তব্যে তিনি দলের নয় গৌটা পৌরবাসীর মেয়র হবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যা পৌরবাসীর জন্যে আশার বার্তা দিচ্ছে। আর আমাদের দলের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা আক্তার হোসেন মাঝি, তিনিও একজন জনপ্রিয় পরীক্ষিত নেতা। নিশ্চই এই দুই প্রার্থীর মধ্যে যে কোনো একজন মেয়র নির্বাচিত হবেন। আমি জিল্লুর রহমান জুয়েল ভাইকে ফোন করে ধন্যবাদ দিয়েছি। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর প্রতি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, কেবল নির্বাচনকালীন সময়ে নয়, নির্বাচন পরবর্তী সময়েও তার এই সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও শিষ্টাচারপ‚র্ণতা অব্যাহত থাকে।
এদিকে নির্বাচনি প্রচারণা ও বিভিন্ন বৈঠকে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থী। আমি চাঁদপুরবাসীর প্রিয় অভিভাবক ডা. দীপু মনি এমপি এবং চাঁদপুরের আওয়ামী পরিবারের মনোনিত প্রার্থী। তাই আমি জনগণের ভোটেই বিজয়ী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হবো, ইনশাল্লাহ। আমি নির্বাচিত হলে পৌরসভা হবে সকল জনগণের। দলমত নির্বিশেষ সকল পৌরবাসীর নাগরীক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবো।’
তার এমন বক্তব্যে ভোটােদের ইতিবাচক চিন্তার জন্ম দিয়েছে। তাদের দাবি চাঁদপুরের রাজনীতিতে দুটি দলের প্রত্যেকটি কাজে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক। প্রার্থী যে দলের-ই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের আস্থা, বিশ্বাস, শান্তি, নিরাপত্তা, কল্যাণ, সুশাসন ইত্যাদি চিরায়ত রাজনৈতিক ম‚ল্যবোধ ও আদর্শের বাইরে তিনি যেনো না থাকেন।
রাজনীতির মাঠে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্যের জন্যে ম‚ল্যবোধ ও আদর্শকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। তবেই আমাদের রাজনীতির হারানো গৌরব, ঐতিহ্য, মর্যাদা ও অহংকার আবার ফিরে আসবে। যা মঙ্গল বয়ে আনবে সাধারণ মানুষের জীবনে। নেতাদের গণমুখী চরিত্র ও সৎ রাজনৈতিক জীবনের কারণে মানুষ মতভেদ ভুলে তাদেরকে অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা, সম্মান ও সমীহ করবে।
আশিক বিন রহিম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০