চাঁদপুরে রাজনীতিতে গত চার দশকের একটি পরিচিত নাম শফিকুর রহমান ভুইয়া। জনমানুষের কাছে তিনি শফিক ভুইয়া নামেই বেশে পরিচিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তিনি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
চাঁদপুর পৌরসভার বর্তমান অধুনিক ভবন থেকে শুরু করে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন তাঁর হাত ধরে হয়েছে। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন যথেষ্ট রকম প্রাজ্ঞ, জ্ঞাণী, পরিশ্রমী এবং কর্মীবান্ধব একজন নেতা। নিজের দল ছাড়াও বিপরীত রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে ছিলেন সন্মানিত। সাধারণ মানুষের সাথে ছিলো তাঁর চমৎকার সম্পর্ক । ফলে দলমত নির্বিশেষে তিনি চাঁদপুর জেলাবাসীর কাছে ছিলেন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
শফিকুর রহমান ভুইয়া রাজনীতি শুরু করেন জাতীয়তাবাদী যুবদল দিয়ে। তিনি চাঁদপুর জেলা যুবদলের তৃণমূল থেকে উঠে এসে জেলা সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মূলত জেলা যুবদলের সভাপতি হওবার পর থেকেই তিনি রাজনীতিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে জেলা বিএনপির কাউন্সিল হলে তিনি বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেষত ওই কাউন্সিলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়র মমিন এবং সাধারণ সম্পাদক হন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
মূলত এরপর থেকেই চাঁদপুরের রাজনীতিতে শুরু হয় গ্রুপিং। সবশেষ শফিক ভূঁইয়া ২০১৫ সালে তিনি স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে অংশ নেন। ভোটে ব্যপক কারচুপি ও অনিয়ম দেখে নিজেকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন।
তবে দলের দুঃসময়ে তিনি ছিলেন নিবেদিত। বহুবার জেল খেটেছেন। মামলার আসামী হয়েছেন। একাধিকবার বহিষ্কারের বোঝা মাথায় নিয়েও দলের আদর্শ থেকে এক চুল বিচ্যুত হননি। সবশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
এদিকে প্রায় এক যুগ ধরে চলে আসা চাঁদপুরের বিএনপির রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ে অবসান ঘটিয়ে গেলো ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলা বিএনপিতে ঐক্যের চাঁদ উঠে। চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে ওইদিনের জেলা বিএনপির এক সভায় শফিকুর রহমান ভূঁইয়াকে চাঁদপুর পৌর নির্বাচনে ধানের শীষের একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। এরপ থেকেই আবারও রাজনীতির মাঠে পূর্ণ সরব হয়ে উঠে জেলা বিনএপি। আবারও বিএনপির সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এক হয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সবশেষ কর্মীদেরকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে শুক্রবার ভোর ৫ টায় আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুর শহরের প্রিমিয়ার হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন। মুহূর্তেই সোস্যাল মিডিয়া ও পারস্পরিক মুঠোফোনে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। ভোর বেলাতেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীরা তাকে শেষবারের দেখতে ভিড় জমায়। দলমত নির্বিশেষে সবার চোখেই ছিলো পানি। দিনভর জেলার ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরে হোমপেজজুড়ে ছিলো তার ছবি ও শোকবার্তা। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকা এ প্রার্থীর আকস্মিক মৃত্যু সবাই হতবম্ভ হয়ে যান।
জানাযার লাইভ ভিডিও-
মৃত্যুর আগের সময় সম্পর্কে দলীয় সূত্রে জানাযায় ভূঁইয়া তার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাতে নির্বাচনী পরামর্শ সভা করেন। পরে অসুস্থতাবোধ করলে হলে চাঁদপুর শহরের প্রিমিয়ার হসপিটালে সেয়া হলে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেয়ার পূর্বেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।
চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক এ চেয়ারম্যানেরর মৃত্যুতে চাঁদপুর জেলা বিএনপিসহ পৌরবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরহুমের প্রথম নামাজে জানাযা শুক্রবার বাদ আছর চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানযায় হাজার হাজার মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম, ১৩ মার্চ ২০২০