সারাদেশ

চাঁদপুরের রসুর মতো আরেক ‘রসু খাঁ’ আটক

‘আমি চারবার বিয়ে করেছি। বর্তমান স্ত্রী পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানায় বাবা-মার সঙ্গে থাকে। আমার দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে। আমার কুকীর্তির কথা এত দিন পরিবার জানত না, বৃহস্পতিবার জেনেছে। এখন সবাই আমাকে ঘৃণা করছে। ছিঃ ছিঃ করছে।’

একের পর এক ধর্ষণের পরেই ভুক্তভোগীকে হত্যা করতো রসু খা। তার এ ঘৃণ্য কর্মকা-ের জন্য দেশজুড়ে সে পরিচিতি পেয়েছে সিরিয়াল কিলার হিসেবে। এবার রসু খাঁ’র মতো চট্টগ্রামে বেলাল হোসেন দফাদার নামের এক সিরিয়াল ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। অনেক শিশু ধর্ষণ করার কথা অবলীলায় স্বীকার করায় বেলালকে দ্বিতীয় রসু খাঁ বলছে পুলিশ।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘বেলাল একজন সিরিয়াল ধর্ষক। কয়েক বছর ধরে ফুসলিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে শতাধিক শিশুকে ধর্ষণ করার কথা সে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। বলতে গেলে সে দ্বিতীয় রসু খাঁ। রসু খাঁ’র সঙ্গে তার পার্থক্য হলো-রসু খাঁ ধর্ষণের পর খুন করতো, আর বেলাল ধর্ষণ করে ছেড়ে দিতো-এটাই।’

পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। কিন্তু এ পেশার আড়ালে সে শিশুদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালাত। লাকড়ি ও টাকা দেওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে অটোরিকশাতে করে তুলে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে শিশুদের ধর্ষণ করত।

এত দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও শুক্রবার সে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে।

বায়েজিদ থানা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে বায়েজিদ থানা এলাকার চা বোর্ড মাঠ থেকে এক শিশুকে লাকড়ি দেওয়ার নাম করে সিএনজি অটোরিকশায় করে কোতোয়ালি থানার সিআরবি এলাকায় ধর্ষণ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। অটোরিকশাটি সিআরবির শহীদ মিনার এলাকায় পৌঁছালে শিশুটি চিৎকার করলে আশপাশের মানুষ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদি হয়ে বায়েজিদ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। এরপর শুক্রবার দুপুরে বেলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি আরেফিননগর থেকে ৮ বছরের আরেকটি শিশুকেও সে চকবাজার এমএম আলী সড়কে নিয়ে যায়।

সেখানে একটি নালার ভেতর শিশুটিকে ধর্ষণ করে বলেও জানায়। পরে পুলিশ খবর নিয়ে ওই শিশুটির পরিচয় বের করে। তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। এরপর ওই শিশুটির পরিবার এসে বেলালের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আরও একটি মামলা করে।

তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দুটি মামলা হয়েছে উল্লেখ করে বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আরও বলেন, ‘বেলাল শুধু শিশু ধর্ষক না। সে একজন চোর ও মদ বিক্রেতাও। মাদক দ্রব্য আইনে তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলাও রয়েছে।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বায়েজিদ থানা হেফাজতে বেলালের সঙ্গে কথা হয়।

এ সময় বেলাল জানায়, ‘লাকড়ি ও টাকা দেওয়ার নাম করে সে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের তার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে ধর্ষণ করত। ধর্ষণ শেষে পুনরায় অটোরিকশা করে ওই শিশুদের বাড়ির পাশে নামিয়ে দিত। শিশুগুলো তার অপরিচিত বলে জানায় বেলাল।’

বেলাল জানায়, সে আগে অটোরিকশা করে বিভিন্ন জায়গায় মদ চালান করত। ২০০৬ সালে মদ চালান করার সময় পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। পরে আট মাসের জেল কেটে বাইরে আসার পর সে বিভিন্ন জায়গায় চুরি করত। কয়েকবছর ধরে শিশু ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে।

বেলাল জানায়, ‘আমি চারবার বিয়ে করেছি। বর্তমান স্ত্রী পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানায় বাবা-মার সঙ্গে থাকে। আমার দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে। আমার কুকীর্তির কথা এত দিন পরিবার জানত না, বৃহস্পতিবার জেনেছে। এখন সবাই আমাকে ঘৃণা করছে। ছিঃ ছিঃ করছে।’

একপর্যায়ে বেলাল বলে উঠে, ‘আমি অনুতপ্ত। আমি অন্যায় করেছি। এসব খারাপ কাজ করার জন্য আমার ফাঁসি চাই।’

 নিউজ ডেস্ক : আপডেট ০৩:১০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শনিবার

ডিএইচ

Share