Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের মানুষ সর্বদা এক নম্বরে থাকতে চায় : জেলা প্রশাসক
city-of-hilsha
Chandpur City Of Hilsha Dreamer & Creator Md. Abdus Sabur Mandal

চাঁদপুরের মানুষ সর্বদা এক নম্বরে থাকতে চায় : জেলা প্রশাসক

চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে তিনদিন ব্যাপি উন্নয়ন মেলাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুরে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ে সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক চাঁদপুরের কিছু উন্নয়চিত্রের আংশিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। চাঁদপুর টাইমস পাঠকদের জন্যে তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর যে উন্নয়ন মেলা হচ্ছে, তা আমরা ভিন্নভাবে সাজিয়েছি। সকাল ৯ টায় জেলার উন্নয়ন বিষয়ক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও র‌্যালি শেষে সকাল ১০ টায় ৩য় বারের মতো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরের উন্নয়ন মেলা উদ্বোধন করবেন। তবে সারাদেশে একযোগে এ উন্নয়ন মেলা হলেও র‌্যালি বা শোভাযাত্রার মতো কর্মসূচি কারো নেই। শুধুমাত্র ইনোভেশন (নতুনত্ব) হিসেবে চাঁদপুরে মেলার পাশাপাশি উন্নয়ন বিষয়ক র‌্যালি ও শোভাযাত্রা স্টেডিয়াম গেট থেকে শুরু হবে। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, কৃষক-শ্রমিকসহ উন্নয়নের অংশীদার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন।

এই মেলাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর যে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে তা উপস্থাপন করতে চাই। এর মধ্যে চাঁদপুর নদী ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন, চরাঞ্চলের মানুষের জন্য স্যোলার দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জেলা ৩শ’ ৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাকা করণ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার থেকে চাঁদপুরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা বলে শেষ করা যাবে না।

তিনি বলেন, চাঁদপুরে আরো উন্নয়ন কর্মকান্ডে করার চেষ্টা চলছে। চাঁদপুর যদি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অনুমোদন পায়, তাহলে জেলার আয় অনেক বেড়ে যাবে। এখানকার মানুষ আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হবে এবং বেকারত্ব অনেক কমে যাবে।

এদিকে মাননীয় প্রথানমন্ত্রী গত ৪ জানুয়ারি চাঁদপুরে দুটি ইকনোমিক জোনের মধ্যে মতলবের ৩ হাজার ৩৭ একর ইকোনোমিক জোনোর চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইসিটি নির্ভর এ ইকোনমিক জোন সম্পন্ন হলে চাঁদপুরের তরুণ প্রজন্মের কেউ আর বেকার থাকবে না। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। মাদক, বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাদক ও বাল্য নিয়ে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে, তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে, এটি অনেকটা সফলতার দ্বারপ্রান্তে চলে আসছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, এবার চাঁদপুরে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আমি মনে করি চাঁদপুর পাশের ক্ষেত্রে এক নাম্বরে রয়েছে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে প্রাথমিকে এ প্লাসের দিক থেকে চাঁদপুর ৩য়। এর মধ্যে ঢাকা প্রথম, গাজীপুর ২য়। কিন্তু এ দুটো জেলার মধ্যে চরাঞ্চল নেই, তাই তাদের চরাঞ্চল কেন্দ্রিক কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। কিন্তু আমাদের অনেকগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় চরাঞ্চলে রয়েছে। সে হিসেব এ ফলাফল আমরা প্রথম হিসেবে ধরতে পারি।’

প্রাথমিকে পাসের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকে পাসের হার দিক থেকে চাঁদপুর ৫ম। এদিক থেকেও চাঁদপুরকে প্রথম হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ অন্য ৪ জেলায় চাঁদপুরের দুর্যোগ প্রবণ এলাকা নেই। চাঁদপুর যে কোন জেলার থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সফলতা একা অর্জন করা সম্ভব নয়। আমি বিগত দিনের ন্যায় চাঁদপুরবাসী এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা সকলকে উন্নয়ন কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। আমরা চাঁদপুরে উন্নয়ন মেলাকে সেবা প্রদানের মুল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

মো. আব্দুস সবুর মন্ডল আরো বলেন, ভিক্ষুক মুক্তকরণে আমাদের ফান্ডে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা আছে। মানবজাতির জন্য অভিশাপ দারিদ্রতা। তাই আমি চাই এই টাকার সঠিক ব্যবহার হোক। এজন্য আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবসহ সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা তথ্য পেয়েছি এই জেলায় ৫ হাজার ভিক্ষুক রয়েছে কিন্তুসঠিকভাবে যাচাই-বাচাই করে ২৩শ’ ৮৪জনের তথ্য পেয়েছি। আমরা আরো অনুসন্ধান করে দেখছি। এ বিষয়ে চাঁদপুরে ৩টি ইউনিয়ন পুরোপুরি দারিদ্রমুক্ত করতে বিকেএসপি দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। এর মধ্যে হাইমচেরর একটি ও মতলব উত্তরের ২টি চরাঞ্চল কেন্দ্রিক ইউনিয়ন রয়েছে।

মেগা প্রকল্পের কয়েকটির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মতলব সেতু নির্মিত হচ্ছে, আগামি কয়েক মাসের মধ্যেই এর কাজ সম্পন্ন হবে। চাঁদপুর বাসীর যাতায়াত সুগম হবে। নদী ভাঙন নিয়ে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। তবে এটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ পার করেছে। যা চাঁদপুরবাসীর জন্যে এক সম্ভাবনাময় শুভ সংবাদ।

‘ক্লিন চাঁদপুর গ্রিন চাঁদপুর’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্লিন চাঁদপুর, গ্রিন চাঁদপুরসহ ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে আমরা অন্তত ২০ টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যারা অনেকগুলো সম্পর্কে চাঁদপুরবাসী জানেন না। এর অধিকাংশগুলো সরকারি অর্থায়নে করা হয়নি এবং কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে আর কিছু চলমান রয়েছে। আবার কিছু প্রকল্প পৌরসভার সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলো পৌরসভার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে রাস্তাঘাটগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্লিন চাঁদপুর গ্রিন চাঁদপুর আলোর মুখ দেখেনি, শহরের সবক’টি রাস্তার কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে, অতি দ্রæত শেষ হয়ে যাবে। তখন ক্লিন চাঁদপুর গ্রিন চাঁদপুরের প্রতিফলন চাঁদপুরবাসী পাবে।

আরো কয়েকটি ব্র্যান্ডিং জেলা প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরে বলেন, শুধু ব্র্যান্ডিং জেলা বাস্তবায়নে আমরা ভিক্ষুকমুক্তকরণ, শিক্ষাবৃত্তি, শহরকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত ও আলোক সজ্জা করা ইত্যাদি অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ভিক্ষুকমুক্তকরণে চাঁদপুর সদর ইউএনওকে একটি ভিন্ন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তিনি আগামি কয়েক মাসের মধ্যে আশা করি ভালো একটি ফলাফল দিতে পাররবেন। তবে এ কাজে ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ড থেকে কোনো অর্থ খরচ হবে না। কারণ আমরা ভিন্ন উপায়ে ভিক্ষুকমুক্ত করার চেষ্ট করছি।

কর্মকর্তাদের পদক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাঁদপুরের সব কর্মকর্তারাই কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। সবাই পদক পাননি এটাই যেমন ঠিক, তেমনি এ পদক সকল কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টার ফসল। আইসিটি পদক, জনপ্রশাসন পদক রাষ্ট্রের অনেকেই পেয়েছেন, কিন্তু আমার নিজের হিসেবে নয়, চাঁদপুরবাসীর এটা গৌরব যে, জেলা প্রশাসক হিসেবে চাঁদপুরই এ পদক পেয়েছেন। কারণ চাঁদপুরের মানুষ সর্বদা প্রথম স্থানে থাকতে চায়, এ মানসিকতা তাদের রয়েছে, তারা প্রশাসনকে সেভাবে সহযোগিতাও করে। আমরা যারা পদক পেয়েছি তাঁরা হয়তো চাঁদপুরে কাজ না করলে এ পদক পাওয়ার সুযোগ থাকতো না, তাই এ পদক চাঁদপুরবাসীর।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আমার দায়িত্ব থাকাকালিন বিগত ৩ বছরে চাঁদপুর থেকে একজন কর্মকর্তাও টাকা (অবৈধ) নিয়ে যেতে পারেননি। এখানে কোনো দালাল, বাটপার, ঘুষখোর, সুদখোরের স্থান নেই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দায়িত্বজ্ঞানহীন চিকিৎসকদের প্রতি অসন্তুষ্ট। আমি নিজেও জেলা প্রশাসক হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে চিকিৎসকদের অনেক কথা বলেছি। এরপরেও তারা সংশোধন না হলে আপনারাই (সাংবাদিকরা) তাদেরকে প্রশ্ন করবেন। তবে চিকিৎসকদের মনে রাখা উচিত তারা রাষ্ট্রের টাকায় পড়াশোনা করেছেন, তারা রাষ্ট্রের সম্পদ ও সেবক। সে হিসেবে তাদের বিবেকবান হয়ে কাজ করা উচিত।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমানের পরিচালনায় সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মিলন, সোহেল রুশদী, বর্মতান যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রুবেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আলম পলাশ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিতক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মঈনুল হাসান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান মন্টুসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন ও আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯:৪৩ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার
ডিএইচ