Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের মাধ্যমিক শিক্ষাঙ্গনে নাজুক স্যানিটেশন : ছাত্রীদের বিড়ম্বনা
Sanitation
একটি খোলা পায়খানা (ফাইল ছবি)

চাঁদপুরের মাধ্যমিক শিক্ষাঙ্গনে নাজুক স্যানিটেশন : ছাত্রীদের বিড়ম্বনা

চাঁদপুরের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটেশন (টয়লেট) সঙ্কটে বিড়ম্বনায় অধ্যায়নরত নারী শিক্ষার্থীরা। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বয়ঃসন্ধিকালীন নানা সমস্যায় ছাত্রীরা প্রায়ই স্কুল-কলেজে অনুপস্থিত থাকে।

জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থতাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপস্থিতির হার অনেকটাই হ্রাস পায়। অপরদিকে সহ-শিক্ষা (ছেলে-মেয়ে) কার্যক্রমে পরিচালিত অধিকাংশ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সমস্যা আরো প্রকট।

জেলার মফস্বল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিব্রতকর পর্যায়ে।

তবে জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, জেলার অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা স্যনিটেশনের ব্যবস্থা নেই। যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম থাকায় আন্তঃহীন সমস্যায় পড়ে ছাত্রীরা। সমস্যা লাঘবে সংশ্লিষ্টরা বিব্রত হলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজগুলোতে ছাত্রীদের বয়ঃসন্ধিকালীন অসুস্থতায় স্যানিটেশন (টয়লেট) ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই একটি টয়লেট থাকায় সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, বর্তমানে জেলায় মাধ্যমিক, নি¤œ ম্যধমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখায় মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ২শ’ ২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫৪ হাজার, ৮শ’ ৭০ জন এবং ছাত্রী ২ লাখ ৫ হাজার ৩শ’ ৫৩ জন।

কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, ছাত্রীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যার জন্যে সচেতনতা অনেটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো অজ্ঞতার শেষ নেই। এ কারণেই অসুস্থ শিক্ষার্থীরা টয়লেটের অপব্যহারের কারণে প্রায় সময়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সমস্যা লেগে থাকে। আর ছাত্রীদের অসুস্থ অবস্থায় টয়লেট ব্যবহারকালে শিক্ষক ও ছাত্ররা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে।

অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাজুক স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে ছাত্রীরা শারীরিক সমস্যায় বিদ্যালয় ও কলেজে অনুপস্থিত থাকার কথা জানান শিক্ষকরা। ফলে বয়ঃসন্ধিকালীন ছাত্রীদের ক্লাশের দৈনন্দিন শিক্ষাগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অভিযোগ, অসুস্থকালীন সময়ে ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে উপস্থিত হলেও বাড়তি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। তারা নিজেদের স্বস্তির জন্য বয়ঃসন্ধিকালীন ন্যাপকিনের অপব্যবহার করে থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানের টয়লেটেগুলোর ব্যবহার ব্যাহত হয়। এজন্য শিক্ষকরা সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেন। শিক্ষার্থীদের অসচেতনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর টয়লেটগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো টয়লেটের পরিবেশ ঠিক রাখা ও সুইপারের আনুসাঙ্গিক খরচ যোগান দেয়াও অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে ।

তবে স্যানিটেশন ব্যবস্থার নাজুক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক অক্ষমতায় বিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনে গড়ে উঠছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়ে পড়ে। যেখানে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, ‘ধর্মীয় অনুশাসন আর পবিত্র কার্যক্রমে সুখ লাভের মাধ্যমে সুস্থ দেহে, সুস্থ মন তৈরি করা’। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্যানিটেশন সমস্যা লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নাই। তেমনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতারও বিকল্প নেই বলে অভিমত শিক্ষকদের।

জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থান সংকুলান ও অর্থের সংস্থান না থাকায় সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানের এসব বিষয়ে শিক্ষকদের রয়েছে অজ্ঞতা।

অনেকেই অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি উদ্যোগে ঝাড়ুদারের (মালি) ব্যবস্থা না থাকায় টয়লেট পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে দুর্গন্ধে টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে রাখা হয় না অতিরিক্ত জুতা ও টয়লেট ব্যবহারের পর হাত-পা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের জন্য সাবানসহ অনান্য উপকরণ। সে কারণেও টয়লেটে যেতে চায় না অধিকাংশ ছাত্রীরাই।

এজন্য ছাত্রীদের অভিযোগ, ভালো পরিবেশ না থাকায় দীর্ঘ সময় স্কুল-কলেজে টয়লেট ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সে কারণে অধিকাংশ সময় তাদের অস্বস্তিবোধ করতে হয়। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের এ সমস্যা লাঘবে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ কারণেই বিদ্যালয় ও কলেজ চলাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের অনুপস্থিতির হারও বৃদ্ধি পচ্ছে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম সাইফুল হক চাঁদপুর টাইমসকে জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানে নাজুক স্যানিটেশন ব্যবস্থা তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হচ্ছে। তার মতে সদর উপজেলার সেনগাও বালিকা উবি’তে নিজস্ব একাডেমিক সঙ্কটের কারণে স্যানিটেশনের সমস্যা দৃশ্যমান।

জেলা শিক্ষা অফিসার সফিউদ্দিন আহম্মেদ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, স্যানিটেশন সমস্যার কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপস্থিতি হ্রাস পাচ্ছে। এটা কমিয়ে আনার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করার জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা প্রদান করছি। পাশাপাশি প্রতিটি টয়লেটে স্বাস্থ্যসম্মত উপকরণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান ও অতিরিক্ত জুতা রাখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্র্দেশ দিয়েছি।

জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় বর্তমানে দাখিল (মাধ্যমিক) ১শ’ ১টি, আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) ৩৭টি, ফাজিল (ডিগ্রি) ৫১টি ও কামিল (মাস্টার্স) ৭টি মাদ্রাসা রয়েছে।

সরকারি কলেজ ২টি, ডিগ্রি কলেজ বেসরকারি ২৪টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১২টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১৪টি, মাধ্যমিক স্কুল সরকারি ৭টি, মাধ্যমিক স্কুল বেসরকারি ২শ’ ৪৭টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬টি ও কারিগরি স্কুল ১টি রয়েছে।

জেলায় স্কুল এন্ড কলেজ, মাধ্যমিক, নি¤œ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ছেলে-মেয়ে মিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ২শ’ ৩৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৮৭ হাজার ৭শ’ ৬১জন ও ছাত্রী ১ লাখ ২৭ হাজার ৪শ’ ৭৮ জন।

অপরদিকে মাদ্রায়গুলোর মধ্যে কামিল, ফাজিল, আলিম ও দাখিল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ৮২ হাজার ৫শ’ ৪৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৬ হাজার ২শ’ ৭৪ জন ও ছাত্রী ৪৬ হাজার ২শ’ ৭২ জন।

স্নাতকোত্তর, স্নাতক, উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৯ হাজার ৯শ’ ৩৭জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৯ হাজার ৩শ’ ৭২ জন ও ছাত্রী ৩০ হাজার ৫শ’ ৬৫ জন।

রেজাউল করিম

 

নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৮:৩০ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

এমআরআর