চাঁদপুর

চাঁদপুরের বাজার পলিথিন সায়লাব : নজরদরি জরুরি

চাঁদপুরের বড় বড় হাট বাজারের নামিদামি মুদি দোকান থেকে শুরু করে খাড়ি দিয়ে মাছ বিক্রেতাসহ সব ধরনের ফেরিওয়ালা এখন যে কোনো দ্রব্য বিক্রি করতে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার করছে। ফলে চাঁদপুরের সর্বত্র পলিথিন শপিং ব্যাগে বাজার সায়লাব হয়ে যাচ্ছে।

পলিথিন শপিং ব্যাগ বহনে হালকা পাতলা, সহজলভ্য ও বিনে পয়সায় দোকানিরা দিয়ে দেয়। চাওয়ামাত্র একাধিক ব্যাগ ক্রেতাকে দোকান্দার দিয়ে দেন।

অনেক ক্রেতা বা ছোটবড় চাকুরিজীবী বাজারে কেনাকাটা করার সময় বাজার বহন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যাগ নিয়ে আসে না।

তাই দোকানদাররা যে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রয়ে প্রতিটির জন্য পলিথিন শপিং ব্যাগ ভর্তি করে পণ্য দিতে কার্পণ্য বোধ করে না। এ ভাবেই পলিথিন শপিংব্যাগ ব্যবহার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলছে।

এক শ্রেণির ছোট থেকে বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও যে কোনো পণ্য দিতে হাস্যবধনে পলিথিন ব্যাগ দিয়ে দিচ্ছে। তবে পার্থক্য শুধু এখনকার শপিং ব্যাগগুলি বিভিন্ন রং বেরং এর নয়।

সাদা ধবধবে সব রকমের পরিমাপের শপিং ব্যাগ বাজারের মুদি দোকানদারগণ মাছ, মাংস, ডিম, পান সুপারি, ফল, হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন , পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রকমের ব্যবহার্য দ্রব্য বিক্রি করতে এখন শপিং ব্যাগ ব্যবহার করছে।

এমন কোনো এ জাতীয় দোকান নেই যে তার ক্রেতাকে খুশি করার জন্যে বিক্রিত সব ধরনের পণ্য দেয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে না।

সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত সকল পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন ,আমদানি ,বাজারজাতকরণ, মজুত, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্যে প্রদর্শন, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন।

আইন লংঘনকারীকে অনধিক ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থ বা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান করা হয়েছে।

অথচ আমদানিকারী, মজুদদার, পাইকারি বিক্রেতা ও অসাধু একশ্রেণির ব্যবসায়ী এ আইন অমান্য করে পলিথিন শপিং ব্যাগ দেদারছে বিক্রি করছে। গ্রাম্য এক বাজারের মুদি দোকানদার বলেন, যেখানে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন করে তাদের কেন প্রশাসন বা পুলিশ ধরে না।

তবে চাঁদপুর কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে নৌ-পথের জলযান থেকে পলিথিন জব্দ করার খবর পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার শুরু হয়। এর পাশাপাশি আমেরিকার বিজ্ঞানীরা হালকা, শক্ত ও নমনীয় এ পলিথিনের উদ্ভাবন করেন।

সে থেকেই ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকায় এর ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯৭৬ সালে ফিলিপাইনের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. সেকোনো গবেষণা করে ক্যারোলিন বা টেট্রন উদ্ভাবন করেন।

পুন:পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯৮০ সালের দিকে পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার শুরু হয়। সে থেকে আমাদের দেশেও এর প্রচলন অনুপ্রবেশ হয়। ১৯৮৩ সালে রাজধানী ঢাকায় সর্বপ্রথম পলিথিন উৎপাদন কারখানা স্থাপিত হয়।

সর্বশেষ তথ্য মতে , সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ছোট বড় কারখানা চালু হয় । এতে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও পলিথিন ব্যবহারে দেশের সর্বত্র পরিবেশের ওপর মারাত্মক হুমকীর সৃষ্টি করে যাচ্ছে।

এখন আবার প্রতিটি দৈনন্দিন কাজে কর্মে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে,পলিথিন সহজেই পচনশীল নয় বলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক হুমকী সৃষ্টি করে চলছে। এটি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। ইহা ক্ষয় হয়না এবং অনেকদিন অক্ষত থাকে। ফলে মাটির জন্যে খুবই ক্ষতিকর।

মাটির ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলে মাটিতে সূর্যরশ্মি পৌঁছাতে বিঘœ ঘটায়। ফসলের জমিতে উৎপাদনের ব্যাঘাত ঘটায় ও আগুনে পুড়লেও জনস¦াস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে।শহর-নগর-বন্দরের সব প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নালা-নর্দমা বন্ধ করে দুর্গন্ধ বাড়িয়ে জনস্বাস্থ্যের হুমকী সৃষ্টি করেই চলছে।

কোনো কোনো গৃহিণীরা তাদের ছোট ছোট শিশুদের মলমূত্রসহ গৃহস্থালীর আবর্জনা পলিথিনে ভর্তি করে নর্দমা বা ড্রেনে ফেলে দেয়।এতে পশু-পাখি দ্বারা পরিবেশ দূষণ বাড়িয়ে থাকে।

পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এর বাজারও পড়ে যায়।

।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ১০:৩১ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৬, শনিবার
এইউ

About The Author

প্রতিবেদক- আবদুল গনি
Share