চাঁদপুর

করোনায় ছুটিতে এসে অর্থনৈতিক সংকটে চাঁদপুরের প্রবাসীরা

ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাঁদপুর জেলার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শ্রমজীবী বৈধ উপায়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছেন।

তাদের উপার্জনকৃত বৈদেশিক মুদ্রা প্রতি মাসেই স্বজনদের কাছে ব্যাংক ও অন্যান্য এজেন্সির মাধ্যমে প্রেরণ করেন। ব্যাংকিং মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে পরিসংখ্যান বিহীন আরো রেমিট্যান্স আসে প্রবাসে কর্মরত এই যোদ্ধাদের নিকট হতে।

বিশ্বজুড়ে চলমান করোনার ভয়াল থাবায় দুমড়ে মুছড়ে গেছে চাঁদপুরের প্রবাস ফেরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পরিবার। চলতি বছরে বিদেশ থেকে যারা ছুটিতে এসেছে, তারা আজ দ্বিমুখী অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। একদিকে তাদের কর্মস্থলে বাসা ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে দেশে এসে তাদের জমাকৃত অর্থ শেষ হওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় দিনযাপন করছেন।

চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার আড়াই লাখ প্রবাসী ৩৮৯ কোটি ৯ লাখ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছেন। প্রাণঘাতী করোনার ভয়াল থাবায় এ জেলার প্রবাসী যোদ্ধারা নানান সমস্যায় থেকেও তাদের পরিবার পরিজনের জন্য অর্থ যোগান দিতে বিভিন্ন উপায়ে টাকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে ছুটিতে আসা প্রবাসীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। জেলায় এমনও প্রবাসী রয়েছে, যাদের ছুটিতে আসার পর পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় তারা তাদের প্রবাসের কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে হতাশাগ্রস্ত।

ছুটিতে আসা সৌদি প্রবাসী জেলা সদরের নতুন বাজারের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল মিঝি জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে তার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে দেশে ফিরেছেন। দেশে আসার এক দিন পরেই তার মা মারা গেছেন। তারপরের মাস থেকেই সারাদেশ লকডাউন হয়ে যায়। গত মে মাসের ১ তারিখে মোস্তফা কামালের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। প্রবাসী কর্মস্থলে এখন পর্যন্ত তার প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা বাকি পড়ে গেছে। অন্যদিকে দেশে আসার পর জমাকৃত অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় তিনি তার পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত জীবনযাপন করছেন। যদি কোনোভাবে আবার যাওয়ার সুযোগ হয় তাহলে এই ঋণ পরিশোধ করে তারপর রুজি রুটির ব্যবস্থা করতে হবে। যেটা একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলে তিনি মনে করেন।

মালেয়শিয়া প্রবাসী জসিম শেখ বলেন, আমি গত জানুয়ারি মাসে দেশে ছুটিতে এসেছি। ফেরত যাওয়ার কথা ছিলো মার্চ মাসে। করোনার কারণে দেশ লকডাউনের আওতায় চলে আসে। প্রবাসের কর্মস্থলে আমার অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কোনোভাবে আমি আমার উপার্জন দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করি। কাজের চাপে পড়ে আমাকে ছুটিতে আসতে হয়েছে। থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আমি দেশে আসিনি। এখন আমার মাথার উপর ঋণের বোঝা বিদ্যমান। আদৌ আমি আমার কর্মস্থলে ফিরত যেতে পারবো কি না তা নিয়ে সন্দিহান।

সৌদি প্রবাসী ইয়াহিয়া জানান, তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরত আসতে গিয়ে লকডাউনে আটকা পড়েন। আজকে প্রায় ৪ মাস হয়েছে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। তার হিসেব মতে, সেখানকার কর্মস্থলে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়ে গেছে। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচে এ ঋণ হয়েছে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে গেলেই তাকে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

জেলা প্রবাসী কল্যাণ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অলিদুজ্জামান জানান, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশী প্রবাসীদের ভিসা এবং পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত তারা তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা এবং টিকেট দিয়ে প্রবাসের কর্মস্থলে যেতে পারবে। এছাড়াও করোনা প্রভাবে যে সকল প্রবাসীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বল্প সুদে ঋণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এতো কিছুর পরেও খুশির সংবাদ হচ্ছে, মাহামারী করোনাভাইরাস নির্মূল হলেই দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ নতুন শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ ।

প্রতিবেদন : সানাউল হক, ১৬ জুন ২০২০

Share