চাঁদপুরের প্রথম নারী পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় পুলিশ প্যারেড

‘বিসিএস-এ প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ। পেশা হিসেবে পুলিশকেই বেছে নিয়েছিলাম। কর্মজীবনে দেখেছি এ কাজে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। কোনও অসুবিধা নেই। সবারই এমন একটি সুযোগের জন্য অপেক্ষায় থাকা উচিত’ জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ প্যারেড অনুষ্ঠান পূর্ব মুহূর্তে মা-বাবাকে পাশে রেখেই কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুরের প্রথম নারী পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারী কর্মকর্তা পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবারের এই প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম। অধিনায়ক হিসেবে প্যারেডের নেতৃত্ব দেন তিনি।

শামসুন্নাহার বলেন, ‘চাকরি জীবনে হোক আর ব্যক্তি জীবনেই হোক, একটি বাহিনীর প্যারেড কমান্ডার হওয়া সবার জন্যই গৌরবের। সব সময় সবার ভাগ্যে তা জোটে না।’

তিনি জানান, ‘২০০৮ সালেও আমি পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডের উপ-অধিনায়ক ছিলাম। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকায় সেদিন আমার কমান্ডার হওয়ার সুযোগ ছিল না।’

শামসুন্নাহার বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে পুলিশ একাডেমির সারদার ক্যাম্প থেকে প্যারেড করে আসছি, আমি অপেক্ষায় ছিলাম দিনটির জন্য। কারণ, প্যারেড একটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সূক্ষ্ম কাজ। এ জন্য তিনি চাঁদপুরবাসীসহ সবার কাছে দোয়া চাইছি।’

এদিকে পুলিশ সদর দফতর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে নতুন মাইলফলক হিসেবে এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত ১৩টি কনটিনজেন্টের (মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র‌্যাব সহ পুলিশের ১৩টি দল) এই প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেছেন। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত এই প্যারেডে অংশ নিয়েছেন সহ¯্রাধিক পুলিশ সদস্য। লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে এটা নতুন মাইলফলক।

নারী কর্মকর্তাকে প্যারেড অধিনায়ক নির্বাচন করার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি। একটি হলো নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া, আরেকটি লৈঙ্গিক সমতা। গত বছর পুলিশ সপ্তাহে প্যারেডে উপ-অধিনায়ক ছিলেন একজন নারী। এবার আমরা অধিনায়কের দায়িত্ব একজন নারী কর্মকর্তাকে দিয়েছি।’

এবারের পুলিশ সপ্তাহে ২০১৫ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১৯ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), ২৩ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা ও ৪০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পদক পরিয়ে দেন।

মঙ্গলবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ সপ্তাহের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র‌্যাবসহ পুলিশের ১৩টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দেন শামসুন্নাহার।

ফরিদপুরের মেয়ে শামসুন্নাহার ১ নভেম্বর ১৯৭৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। প্যারেড অনুষ্ঠানে তার বাবা সামছুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার ও মা আমিনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

২০তম বিসিএস-এর মাধ্যমে শামসুন্নাহার পুলিশে যোগ দেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ও এমফিল পাশ করে স্কলারশিপ পায় যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে তিনি এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২ জন নারী পুলিশ সুপার রয়েছেন তার মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার একজন। (তথ্য ও ছবিসূত্র একাধিক জাতীয় গণমাধ্যম)

(প্রথম আলো অবলম্বনে)

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১২:৫৩ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার

এমআরআর