কলেজে পড়াশোনা। সেখান থেকে চাকরির প্রলোভন। আর এর প্রলোভনে পড়েই বিপদের দিকে পা বাড়ানো। মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এরপর রুম ডেটিংয়ে নিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলা।
সেই ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া। এই হলো কলেজ ছাত্রী শারমিন আক্তার প্রিয়ার অভিনব প্রতারণার কৌশল। আর এই কৌশলের প্রধান টার্গেট তরুণরা। ওই কলেজছাত্রীকে নিয়ে এমন প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে।
অর্থের নেশায় কলেজ ছাত্রীর আর পড়াশোনা হয়ে উঠেছে না। এবার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকায় পড়েছেন ওই কলেজ ছাত্রী।
জানা গেছে, চক্রের মাধ্যমে ওই কলেজ ছাত্রীর হাতে আসতো বিত্তশালীদের তালিকা আর তাদের ফোন নম্বর। তারপর থেকেই শুরু হতো শারমিন আক্তার প্রিয়ার (২২) কাজ। মোবাইলের মাধ্যমে সর্ম্পক তৈরি, তারপর প্রেমের ফাঁদ তৈরি করতেন তিনি।
প্রেমের একপর্যায়ে বাসায় ডেকে এনে আপত্তিকর অবস্থায় নিজের সঙ্গে ছবি তুলে আদায় করা হতো লাখ লাখ টাকার মুক্তিপণ। কিন্তু এতোকিছুর পরও নিজের ভাগ্যে জুটতো মাত্র ৫ হাজার টাকা। কখনো কখনো তারও কম।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে শারমিনকে গ্রেপ্তার করার পর এমনটাই জানিয়েছেন শারমিন। প্রতারক শারমিন আক্তার প্রিয়া লোহাগাড়া আজিজ নগর এলাকার শুক্কুর আলমের মেয়ে।
তার দেয়া তথ্যমতে বুধবার ভোরে পাঁচলাইশ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এ চক্রের আরো কয়েকজন সদস্যকে।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- চক্রের প্রধান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার বাগপুর বেপারি বাড়ীর মৃত দুদু মিয়ার ছেলে মো. শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চু (৪৫) ও তার স্ত্রী শেলি আক্তার (৩৪)।
স্বীকারোক্তিতে শারমিন বলেন, ‘আমি মায়ের সঙ্গে নগরীর অলংকার মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতাম। একবছর আগে ওই এলাকায় আনোয়ার রাজু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। চাকরি দেয়ার কথা বলে রাজু আমাকে এ পেশায় নিয়ে এসেছে। পরে এ পেশা থেকে বের হতে চেষ্টা করলেও রাজুর হুমকির কারণে পারিনি।
এছাড়া পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে এ চক্রে থাকতে হয়েছে।’
গত এক বছরে প্রায় ১৫ জনকে আটকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে জানিয়ে শারমিন বলেন, ‘আমি ছাড়াও অনেক মেয়ে আমাদের এ চক্রে কাজ করে। গত একবছরে আমার মাধ্যমে ১৫ জনের কাছ থেকে তারা টাকা আদায় করেছে।
প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। তবে এই চক্রের সদস্যরা আমাকে প্রতিজনে ৫ হাজার টাকার বেশি দিতো না।’
এ বিষয়ে নগর গোয়েন্দো পুলিশের এসআই রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ‘পরিচিত বিত্তশালীদের টার্গেট করে তালিকা অনুযায়ী সুন্দরী মেয়েদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করতো চক্রটি।
বিভক্ত হয়ে চক্রটি নগরীর বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালাতো। এদের কাছ থেকে রক্ষা পেয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও অনেকে চক্ষু লজ্জায় তাও করেননি। এ ধরনের অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে।’
এমআরআর