চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত, ঢালিউডের প্রখ্যাত চিত্রনায়িকা ও প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৪ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অঞ্জনা রহমানের ছেলে নিশাত মণি।
গত এক সপ্তাহ ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে বুধবার (১ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে এই শিল্পীকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। অঞ্জনা রহমানের ছেলে নিশাত মণি জানান, জ্বর ও রক্তে ইনফেকশন জনিত কারণে গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।
অঞ্জনা রহমানের পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার হরিসভা এলাকায়। অঞ্জনার বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র সাহা ব্যাংকের চাকরির সুবাদে ঢাকার ব্যাংক কোয়াটারে বসবাস করতেন। ১৯৬৫ সালের ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন অঞ্জনা। তার মায়ের নাম কমলা সাহা। অঞ্জনা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে প্রখ্যাত পরিচালক ও প্রযোজক আজিজুর রহমানকে বিয়ে করেন।
১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন অঞ্জনা রহমান। তবে নায়িকা হিসেবে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’। রহস্য ভিত্তিক এই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন নায়ক সোহেল রানা। এরপর তিনি দেশি-বিদেশি প্রায় ৩ শতাধিক সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি যৌথ প্রযোজনায় ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, নেপাল, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার অসংখ্য ব্যবসা সকল চলচ্চিত্র অভিনয় করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে তিনি একজন নামী নৃত্যশিল্পী ছিলেন। নিত্য শিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কৃত হন তিনি। ১৯৭৯ সালে এশিয়া মহাদেশের নিত্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন অঞ্জনা। অসাধারণ শিল্পী অঞ্জনা নাচের গুণে দেশ সেরা অভিনেত্রীর তকমা পেয়েছিলেন।
অঞ্জনা রহমান জীবনের শেষ বয়সে এসে রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হন। তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আওয়ামী সংস্কৃতি লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চাঁদপুর সদর-হাইমচর- ৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাশী ছিলেন।
তথ্যঋণ: ‘চাঁদপুরের চাঁদমুখ’। লেখক আশিক বিন রহিম। দ্বিতীয় সংস্করণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩।
‘সংগ্রামে-অর্জনে চাঁদপুরে নারীগণ।’ লেখক আশিক বিন রহিম। প্রকাশকাল অমর একুশের গ্রন্থমেলা ২০১৪।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম,৪ জানুয়ারি ২০২৪