Monday, July 27, 2015 01:18:56 AM
শরীফুল ইসলাম :
রহস্যের মধ্যেই থেকে যাচ্ছেন আলোচিত সেই আজম খান। যিনি ছিলেন মহাজোট সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়ি চালক।
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশের পর তাকে নিয়ে হয়েছে অনেক নাটক। তার সন্ধানে খোঁজ চলেছে সারাদেশে। অনেকের আশঙ্কা ছিল তাকে গুম করা হয়েছে কিংবা তিনি নিজেই আত্মগোপনে রয়েছেন। সেই আজম খান এখন রয়েছেন চাঁদপুরের নিজ গ্রামের বাড়িতেই। তবে অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা কিংবা পরবর্তীতে ‘নিখোঁজ’ থাকা সম্পর্কে খোলাসা করে কিছুই বলতে রাজি না তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির পর ৬-৭ মাস আজম খানের কোনও খোঁজ ছিল না। এরপর থেকে কিছুদিন পরপর আজম খান গোপনে বাড়িতে এসে দু-একদিন থেকে আবার চলে যান। এলাকার লোকজনের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেশেনও না। বর্তমানেও এভাবেই চলছেন আজমের জীবন। দীর্ঘ ফেরারি জীবনে কষ্টের মধ্যেও সুখের সন্ধান পেয়েছেন আজম।
তার ঘর আলো করে এসেছে এক পুত্র সন্তান। আড়াই মাসের এ সন্তানের টানে ছুটে আসা তার। নিজ এলাকায় বাবার জমিজমা দেখছেন, বিভিন্ন সময়ে তাবলিগে সময় দিচ্ছেন। আজম খানের খোঁজ জানতে ২৫ জুলাই মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী ইউনিয়নের উত্তর নওগাঁও গ্রামের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী স্বপ্না প্রথমে বলেন, ‘আজম বাড়িতে নেই।’ একপর্যায়ে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কথা বলেন। আজম নিজেই জানালেন তার তিন বছরের দীর্ঘ আত্মগোপনের কথা। ফেরারি জীবনে অসংখ্য বার স্থান বদল করেছেন তিনি। পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা বিপর্যস্ত জীবনের কথা বলতে গিয়ে বার বার চোখের পানি ফেলেন তিনি।
দীর্ঘ সময়ে নানান জায়গায় নানান পেশায় কাজ করে জীবনাযাপন করতে হয়েছে তাকে। পেশায় ড্রাইভার হলেও ইট ভাঙা থেকে শুরু করে জেলে নৌকায় মাছ ধরার কাজও করতে হয়েছে তাকে। মাঝে মাঝে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে দেখা করতেন গোপনে। ফেরারি জীবনে বিচিত্র পেশায় অপরিচিত জায়গায় দিনযাপন করতে হয় তাকে। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা প্রতিনিয়তই তাড়া করতো। বারবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যকুলতা ছিলো তার মধ্যে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিংবা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বা অন্য কোনও বিষয়ে মুখ খুলেননি আজম। এসব প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। তার একটাই কথা ‘আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল গভীর রাতে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুক বস্তা ভর্তি টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়িচালক আজম খান গাড়িটি পিলখানায় বিজিবির সদর দফতরে ঢুকিয়ে দেন। পরে বিজিবি সদস্যরা গাড়িসহ তাদের আটক করে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
এরপর একই বছর ১৬ এপ্রিল ‘অর্থ কেলেঙ্কারির’ দায়ে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সুরঞ্জিত। এছাড়া রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে বরখাস্ত করা হয়। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আজম খান চতুর্থ। আলী আজম স্থানীয় নওগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন। পরে এপিএস ওমর ফারুকের গাড়ি চালানোর চাকরি নেন।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ডিএইচ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।