Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের কর্মবীর আব্দুল করিম পাটওয়ারী সম্পর্কে অজানা কিছু কথা
Abdul Karim
মরহুম আবদুল করিম পাটওয়ারী (ফাইল ছবি)

চাঁদপুরের কর্মবীর আব্দুল করিম পাটওয়ারী সম্পর্কে অজানা কিছু কথা

পৃথীবিতে মৃত্যুর চেয়ে অনিবার্য সত্য আর কিছুই হয় না। জন্মিলে প্রতিটা মানুষকে মুত্যুর স্বাদ ভোগ করতেই হবে; এটাই বিধির বিধান। তবে ব্যক্তি বিশেষই এই মৃত্যুকে জয় করে মরেও বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। আর এই বেঁচে থাকার একমাত্র উপলক্ষ অথবা মাধ্যম হলো ব্যক্তির কর্ম বা কাজ।

আবার সেই কাজও দু’ভাগে বিভক্ত,যার একটি সুকর্ম অন্যটি কুকর্ম। সুকর্মে ব্যক্তি যেমন নন্দিত হয়ে বেঁচে থাকেন, ঠিক তেমনি কুকর্মের জন্যও অপর ব্যক্তিটি নিন্দিত হয়ে থাকেন যুগ থেকে যুগান্তর।

মুত্যুকে জয় করে মাটি ও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকা তেমনই একজন সাদা মনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম আ. করিম পাটওয়ারী। নদীবিদৌত চাঁদপুরের এই কৃতিজন বেঁচে আছেন এখানকার দল, মত এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে।

ইলিশের শহর খ্যাত চাঁদপুরাকাশের উজ্জল নক্ষত্র প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ১৯৭১ সারে যুদ্ধকালীন সংগ্রাম পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং স্বাধীনতা উত্তর চাঁদপুর মহকুমার অস্থায়ী প্রশাসক ও প্রধান বিচারক, গণপরিষদ সদস্য এবং চাঁদপুর পৌরসভার ২বারের সফল চেয়ারম্যান ছিলেন।

বায়ান্ন ভাষা আন্দোলনে তিনি চাঁদপুরে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটা মানুষের পৃথিবীতে আসার একমাত্র কারণ ভালো কাজ করা। একজন মহৎ কিংবা ভালো মানুষ নির্ধারণের একমাত্র মানদন্ড হচ্ছে ভালো কাজ। ব্যক্তি জীবনকে সুন্দর, উদার ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ভালো কাজ অপরিহার্য।

আর এই ভালো কাজ মানে, যে কর্ম দিয়ে পৃথিবীর কল্যাণ আর মানুষের মঙ্গল হয়। চাঁদপুরবাসীর চির আপন মরহুম আবদুল করিম পাটোয়ারী ১৯২৫ খ্রি: চাঁদপুরে শহরের তালতলা পাটোয়ারী বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা মরহুম রৌশন আলী পাটোয়ারী। দাম্পত্য জীবনে তিনি ছিলেন ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে পর্দাপণ করেন।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন তিনি সততা চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব কালিন সময়ে তার সততা ও নিষ্ঠা এবং ন্যায় পরায়নতার কারণে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে তিনি অন্যতম একজন আদর্শিক রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।

পাকিস্তানকালীন সময়ে তিনি ছিলেন বিডি মেম্বার ও এমপিএ। আমাদরে বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক ও দিপ্তময় অর্জন মহান ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি চাঁদপুরে সংগঠকের দায়িত্ব ছিলেন।

আবদুল করিম পাটোয়ারী ১৯৭১ সানের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধকালীন সংগ্রাম পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি চাঁদপুর মহকুমার অস্থায়ী প্রশাসক ও প্রধান বিচারক, এমসিএ, তৎকালীন মহকুমা রিলিফ ও ফুড কমিটির সভাপতি, কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

প্রয়াত এই জননন্দিত মানুষটি চাঁদপুরের প্রথম পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত অর্জন করেন।

চাঁদপুর পৌরসভার দুই-দুই বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান (১৯৭৩-১৯৮২) থাকাকালিন সময়ে তাঁর কর্মদক্ষতা, সততা ও ন্যায়পরায়নতার ফলে তিনি অধুনিক চাঁদপুর পৌরসভার রূপকার খ্যাতি অর্জন করেন। পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালিন তিনি বিভিন্ন সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্যে জায়গা দান করে গেছেন।

তাঁর অবদান সরূপ শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে (বর্তমান কাজী নজরুল ইসলামসড়ক) প্রতিষ্ঠিত হয় চাঁদপুর প্রেসকøাবের স্থায়ী কার্যালয়। ব্যক্তি জীবনে তিনি বহু সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: সাবেক চাঁদপুর মহকুমা রেডক্রস সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, চাঁদপুর জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য ও কার্যকরী কমিটির সদস্য, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের চীফ ওয়ার্ডেন, চাঁদপুর জেলা কারাগারের অস্থায়ী পরিদর্শক, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সদস্য, কচি-কাঁচার মেলা চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন ডায়াবেটিক সমিতি, মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, চাঁদপুর ফাউন্ডেশন। সফল রাজনীতিকের বাইরেও ধর্মানুরাগী ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারীর ব্যপক পরিচিতি ছিলো। তিনি বাসস্ট্যান্ড মসজিদে গোর-এ গরীবা’র প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি, আঞ্জুমানে খাদেমুল ইনসান চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা (১৯৬৮ খ্রি.) ও পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং শহরের বিষ্ণুদী আজিমিয়া সপ্রাবি’র পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

ব্যক্তিজীবনের সুকর্মের কারণে তিনি শুধুমাত্র চাঁদপুরই নয় গোটা বাংলাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেন। ২০০০ সালের ২১ জানুয়ারি বর্ষিয়ান রাজনীতিক ও সফল সমাজকর্মী এই মানুষটির ৭৫ বছর বয়সের বর্ণাঢ্য উজ্ব্বল জীবনের অবসান ঘটে।

ওইদিন চাঁদপুরবাসীকে কাঁদিয়ে সাদা মনের এই ভালো মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে চাঁদপুরের আকাশ থেকে যেনো একটি উজ্জল নক্ষত্র খসে পড়ে। সুন্দরের আলোয় উদ্ভাসিত কর্মবীর মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী মৃত্যুকে জয় করে আজও মরেও বেঁচে আছেন চাঁদপুর তথা দেশের মাটি ও মানুষের হৃদয়ে।

প্রতিবেদন : আশিক বিন রহিম,
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০৩ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৮, রোববার
ডিএইচ