বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের হরতালের দিন বিমানবন্দর এলাকায় পটকা ফোটানোর মামলায় সব আসামি জামিন পেলেও জামিন মেলেনি এক শিশুর। এমনকি এজাহারভুক্ত আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর মামলার এজাহারে তার বয়স ১৪ বছর বলা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আরও কম ছিল।
বিমানবন্দর থানায় করা এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক লোকমান হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘অনুমানের ভিত্তিতে তার বয়স ১৪ দিয়েছি। তার মা-বাবা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। এমনকি বয়স নির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করিনি।’ অবশ্য মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম জামিউল হকের দাবি, ওই শিশুর বর্তমান বয়স ১১ বছরের বেশি নয়। তিনি ওই শিশুকে আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
শিশুটি এখন টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে আছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। নথিতে দেখা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় পটকা ফোটানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্য শিশুদের সঙ্গে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে অন্যদের ছেড়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার এজাহারে সে ছাড়াও টঙ্গীর চায়ের দোকানদার রোমান, কুদ্দুস, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী বাবুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উত্তরা থানার সভাপতি আসলাম হোসাইনকে। আসামিদের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি আসলাম, কুদ্দুস ও রোমানের সহযোগিতায় আটক শিশুটি পটকা ফোটানোর ঘটনা ঘটায়।
কিন্তু তদন্ত শেষে পুলিশ আসলাম ও কুদ্দুসকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়। অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছিল, এই ঘটনায় আসলাম ও কুদ্দুস জড়িত আছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তদন্ত করে দেখেছি, এই ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটি জড়িত। তাই আসলাম ও কুদ্দুসকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই মামলায় গত সোমবার আদালতে হাজির করা হয় শিশুটিকে। সে বলে, ‘আমি সেদিন এয়ারপোর্ট এলাকা দিয়ে নানির বাড়ি যাইতেছিলাম, তখন পুলিশ আমাকে ধরছে। আমি অপরাধ করিনি। সব মিছা কথা।’ এরপর সে কাঁদতে থাকে।
সব শুনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, শিশুটি নির্যাতনের শিকার। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, শিশুটিকে আইনগত সহায়তা দেবে তাঁদের সংস্থা।
বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শিশুটির বিচার শুরু হয় শিশু আদালতে। এ মামলায় গত ১৫ মাসে মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর গ্রেপ্তারের পর থেকে ওই শিশুকে বারবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। গত সোমবার আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে শিশুটি বলে, আগেই তার মা কাজের জন্য বিদেশ গেছেন। বাবাও খোঁজ রাখেন না। তার কোনো উকিল নেই। এখন সে মুক্তি চায়। লেখাপড়া করতে চায়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শিশুটির স্থায়ী ঠিকানা নাই। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে চাঁদপুরের নবীনগর থানা। সুনির্দিষ্ট এলাকার নাম নেই। সূত্র : প্রথম আলো
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১২:৫১ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার
এমআরআর