ভরা মৌসুমেও কপালে জুটছে না চাঁদপুরের ইলিশ

কুমিল্লায় চোরাকারবারি চক্র এবং আড়তদারদের কারসাজিতে ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরের আসল ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তা। তারা চাঁদপুরের আসল ইলিশ সংগ্রহ করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পাচার করে দিচ্ছে। গেল কয়েকদিন ধরে নগরীর সব আড়ত এবং বাজার ঘুরেও চাঁদপুরের ইলিশের খোঁজ মেলেনি। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও পটুয়াখালীর ইলিশ এনে চাঁদপুরের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। দামও আকাশছোঁয়া। ১ কেজি সাইজের চট্টগ্রামের ইলিশ কুমিল্লার বাজারে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে জেলার ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিন বৃহস্পতিবার নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের আনু ভান্ডারী এবং আব্দুল মান্নানের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, তারা চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুরের ইলিশ বিক্রি করছেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে এসব ইলিশকে চাঁদপুরের বলে তারা দাবি করেননি। কিন্তু পাশেই খুচরা বিক্রেতারা এই আড়ত থেকে ক্রয় করে এসব ইলিশকে চাঁদপুরের ইলিশ বলে বিক্রি করছেন। এ বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, কুমিল্লায় ১০-১২ বছর আগে মৌসুমে চাঁদপুরের ইলিশে সয়লাব থাকত নগরীসহ জেলার সব বাজার। সেই ইলিশের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত আশপাশের বাসা-বাড়িতে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এ স্বাদ এবং ঘ্রাণের ইলিশের নাগাল পাচ্ছে না জেলার ভোক্তারা। নগরীর বাদশা মিয়ার বাজারের খুচরা ইলিশ বিক্রেতা কফিল উদ্দিন বলেন, আড়তদার থেকে যা পাই, তাই বিক্রি করি। আমাদেরকে এসব ইলিশ চাঁদপুরের বলে দেওয়া হয়। আড়তদার কোত্থেকে এসব ইলিশ সংগ্রহ করে, সেটা আমাদের জানা নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই বাজারের অপর এক বিক্রেতা বলেন, আসল ইলিশ রাতেই চলে যায় সীমান্তের ওপারে। চাঁদপুরের ইলিশ নিতে চাইলে আড়তদারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, দাম বেশি পাওয়ায় আড়তদাররা চোরাকারবারিদের চাঁদপুরের ইলিশ সরবরাহ করছে। আবার কোনো কোনো চোরাকারবারি নিজেরাই চাঁদপুর থেকে ইলিশ এনে পাচার করছে।

রানীর বাজারের ভোক্তা আব্দুল আজিজ বলেন, এ মৌসুমে ৫-৬ দিন ইলিশ কিনেছি। আজও ৬০০ গ্রামের ইলিশ ১২শ টাকা কেজিতে নিয়েছি। ইলিশ খাচ্ছি ঠিকই; কিন্তু আগের সেই স্বাদ আর পাচ্ছি না। শুনেছি চাঁদপুরের আসল ইলিশ নাকি ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে চট্টগ্রাম, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর আর সাগরের চন্দনা মাছ দিয়ে বিক্রেতারা প্রতারণা করছে।

ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা ভোক্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে প্রতারণায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, যেহেতু নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামের ইলিশকে চাঁদপুরের বলে বিক্রি করা হচ্ছে, তা অবশ্যই প্রতারণা। আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব মাছ শনাক্ত করার কাজ করব। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ইলিশ চোরাচালানে কোন কোন চক্র জড়িত, তা শনাক্তে আমরা কাজ করছি। পাচার রোধে ভারত সীমান্তমুখী সড়কগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হবে।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১২ জুলাই ২০২৪

Share