প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মুক্ত পদ্মা- মেঘনার শুরু হয়েছে জেলেদের সকল প্রকার মাছ আহরণ উৎসব।
জেলেদের জালে ধরা পড়ছে কাঙ্খিত রূপালি ইলিশ। আর এতে করে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে জেলেপাড়া। কিন্তু যে হারে ইলিশ ধরা পড়ছে, সে হারে স্থানীয়দের মতে দাম কমেনি। তবে দূর থেকে আসা ক্রেতারা তাজা ইলিশ কিনতে পেরে বেশ খুশি। দাম নিয়ে তাদের অভিযোগ নেই, এ যেনো তাজা ইলিশ কিনতে পারার আনন্দ।
বুধবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে জেলেরা সারি সারি নৌকা নিয়ে নদীতে নামতে শুরু করে।
৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পদ্ম-মেঘনা নদীতে ইলিশ জেলেদের মাছ ধরার উৎসব লক্ষ্য করা গেছে।
নদীর পুরো বুক জুড়ে দৃষ্টিসীমায় শুধু জেলে নৌকা আর নৌকা দেখা গেছে। এদিন বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলার বহরিয়া বাজার ও হরিণা ফেরিঘাট, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের দোকানঘর, তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দ বাজার, পৌর এলাকার পুরান বাজার এলাকা ঘুরে আড়ৎগুলোতে ইলিশের উপস্থিতি দেখা যায়।
তবে ২২ দিন নদীতে সকল প্রকার মাছ নিধন বন্ধ থাকায় এবং বাজারে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকায় আড়তগুলোতে চড়া দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে বলে পাইকারী আড়তদাররা জানিয়েছেন।
জেলে এবং আড়তদাররা জানান বাজারে আসা ইলিশগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ‘কিশোর’ ইলিশ।
বহরিয়া এলাকার ইলিশ জেলে আবুল কাশেম জানায়, অভিযানের আগে তাদের জালে প্রচুর সংখ্যক ইলিশ ধরা পড়েছিলো। এ কারণে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়নি। জাটকা নিধন অভিযান সফল হওয়ায় এতো ইলিশ ধরা পড়েছে।’
সরকারের এ ধরনের অভিযানকে তিনি সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী মার্চ ও এপ্রিল মাসে জাটকা রক্ষা অভিযান সফল হলে রূপালি ইলিশের সুদিন আবার ফিরে আসবে।
পৌর এলাকার পুরাণবাজার হরিসভা রোড়ের অপর জেলে হাশেম আলী বলেন, গত ০২ নভেম্বর বুধবার দিনগত রাত থেকেই তারা ইলিশ শিকারে নদীতে নেমেছেন। তাদের জালে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশের সাইজ ২শ’ গ্রাম থেকে ৭/৮শ’ গ্রাম পর্যন্ত। তবে ছোট সাইজের ইলিশই বেশি ধরা পড়ছে।
১ কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকায়। তাদের আড়তে কিশোর ইলিশ (টেম্পু ইলিশ) হালি হিসেবে (৪টা) বিক্রি হয়।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূইয়া বলেন, অভিযানের আগে মেঘনা নদীতে যে সংখ্যক ইলিশ পাওয়া গেছে, এখন একটু কম। ইলিশ প্রজনন মৌসুমে অভিযান সফল হওয়ায় এবার মা ইলিশ নদীতে প্রচুর ডিম ছাড়তে পেরেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর বৃহস্পতিবার প্রথম দিন মাছঘাটে প্রায় শতাধিক মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে।
হাইমচর সংলগ্ন মেঘনা নদীর হায়দারগঞ্জ থেকে শুরু করে চরভৈরবী, চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর-দক্ষিণ ও শরীয়তপুর জেলার পদ্ম-মেঘনার জেলেরা মোটামুটি মাছ পেয়েছে। সামনের ক’টি দিন আরো কি পরিমান মাছ ধরা পরে সেটাই দেখার বিষয়। মাছঘাটে ছোট ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৩ হাজার টাকা মণ দরে আর ৮শ’ ৯শ’ গ্রাম বড় ইলিশের মণ ছিলো ৩২ থেকে ৩৬ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্দ ২২ দিন চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে শুরু করে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার এলাকায় অভয়শ্রম এলাকা হিসেবে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল।
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:০০ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ