অর্থনীতি

চাঁদপুরসহ সারাদেশে শুরু হলো জাতীয় আয়কর মেলা-২০১৮

চাঁদপুরসহ সারাদেশে একযোগে শুরু হলো জাতীয় আয়কর মেলা ২০১৮।চাঁদপুরসহ দেশের ৬৪টি জেলা এবং ১০০টি উপজেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে এ মেলা শুরু হয়।

মঙ্গরবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে জাতীয় আয়কর মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল আল আবদুল মুহিত।অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দেশে মাত্র ১ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর দেয়। সরকারের কাছ থেকে ভাল সেবা পেতে হলে, কমপক্ষে ৪ কোটি মানুষকে কর দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, দেশে বর্তমান প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখ। আর পরোক্ষ কর মিলে এ সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। কিন্তু দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এ সংখ্যাকে অতি নগণ্য হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে, চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রাজস্ব বোর্ডের ঘাড়ে। মেলায় করদাতাদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ দেখে রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান খুশি হলেও, লক্ষ্যমাত্রা পুরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।মেলায় নতুন করদাতা নিবন্ধন- কর প্রদানসহ- এ সংক্রান্ত সব পরিসেবাই সহজে মিলছে

বর্তমানে সারা দেশে ৩৫ লাখ মানুষের আয়কর সনাক্তকারী নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। তাদের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন ২০ লাখ। আগামী দুই বছরে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করার পাশাপাশি ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেছে এনবিআর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় দেশে মাত্র সাত লাখ করদাতার কাছ থেকে আয়কর আদায় করা যেত। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে ৩০ লাখের বেশি হয়েছে।

“আমি কালকেই দেখলাম এখন বিভিন্নভাবে প্রায় এক কোটি মানুষ কর দেয়। অনেক ধরনের কর আছে, সবগুলো ধরলে এক কোটি মানুষ আজকে কর দেয়। এটা যথেষ্ট কৃতিত্বের বিষয়। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি করদাতা।

বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে মঙ্গলবার আয়কর মেলার প্রথমদিনে করদাতাদের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে মঙ্গলবার আয়কর মেলার প্রথমদিনে করদাতাদের ভিড়। “তবে আমাদের উন্নয়ন যেভাবে ধাবিত হচ্ছে, তাতে এক কোটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। এই এক কোটির সঙ্গে আরও কয়েক কোটি এখানে যুক্ত হওয়া উচিত “
মুহিত দাবি করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন সেবা বেড়েছে, মানুষের জীবন মানের উন্নতি হচ্ছে বলেই জনগণ কর দিচ্ছে।

“এখন বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় আপনি ইচ্ছা করলে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে পারেন। এই সুযোগ ৩০ বছর আগেও ছিল না। এর ফলে অর্থনীতির গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং মানুষের মধ্যে বৈষম্য অনেক কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ বৈষম্য এখনো আছে, কিন্তু সেটা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, একসময় দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ। তা এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।

“অর্থাৎ সকলের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ২২ শতাংশও কম নয়। ২২ শতাংশ মানে প্রায় ৩ কোটি মানুষ। এই তিন কোটি মানুষকে এখন উপরে ওঠাতে হবে। সেটাই এখন আমাদের জাতীয় লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশে আয়কর দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, কিন্তু তা এখনও জিডিপির ১০ শতাংশের কম। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই হার ১৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা গতবারের মতই আছে। যাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না।

কোনো ব্যক্তি-করদাতার প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য তার করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা করে বাড়বে। অর্থাৎ, কোনো করদাতার একজন প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে তার করমুক্ত আয়সীমা হবে তিন লাখ টাকা।

করদাতা

করমুক্ত আয়সীমা (টাকা)

সাধারণ করদাতা;২ লাখ ৫০ হাজার
নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতা;৩ লাখ
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা;৪ লাখ

গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা;৪ লাখ ২৫ হাজার

কার জন্য কেমন কর

কর হার

১.প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর;শূন্য
২.পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর;১০ শতাংশ
৩.পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর;১৫ শতাংশ
৪.পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর;২০ শতাংশ
৫.পরবর্তী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর;২৫ শতাংশ
৬.অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর;৩০ শতাংশ

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলায় করদাতা, সম্ভাব্য করদাতা ও ভবিষ্যতের করদাতাদের জন্য ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি রিটার্ন গ্রহণ, কর পরিশোধ এবং কর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

বার্তাকক্ষ
১৩ নভেম্বর ২০১৮

Share