চাঁদপুরে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পাওয়া চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজের ১০ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। মেডিকেল কলেজের ভর্তি শুরু হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। এখানে সুযোগ পাচ্ছে ৫০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী।
এ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ১ম বর্ষে (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি কার্যক্রম এই প্রথম শুরু হলো। ভর্তি আগামী ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর পযর্ন্ত চলবে। অর্থাৎ ২২,২৩ ও ২৪ অক্টোবর এ তিন দিন ভর্তি কার্যক্রম চলবে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের ৪র্থ তলায় ভর্তি কার্যক্রম চলবে। এ হাসপাতালের ৪র্থ তলার উত্তর অংশকে (কেবিন বস্নক ও পেইংবেড) আপাতত মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এখানেই অধ্যক্ষের কার্যালয়, অফিস কক্ষ এবং শ্রেণী কার্যক্রম চলবে।
চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ জামাল সালেহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে এ তথ্য জানা গেছে।
তিনি বলেন, মূলত সারাদেশে মেডিকেল কলেজে ১ম বর্ষে ভর্তি কার্যক্রম আজ ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু। কিন্তু চাঁদপুরে এখনো অফিসিয়াল লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় আমরা ২২, ২৩ ও ২৪ অক্টোবর এ তিনদিন ভতির জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছি। কারণ, আমি অন্য জায়গা থেকে লোক এনে এতোদিন (১৫-২৪ অক্টোবর দশ দিন) আটকিয়ে রাখতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু চাঁদপুর নয়, অন্যান্য মেডিকেল কলেজেও পুরো দশদিন ভর্তি কার্যক্রম চালানো হয় না। সেখানেও স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী কয়েকদিন নির্ধারণ করা হয়। ২২ অক্টোবরের আগেই চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস (সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ৪র্থ তলা) প্রস্তুত হয়ে যাবে। এর আগে ভর্তি সংক্রান্ত কেউ যোগাযোগ করতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিসে এসে যোগাযোগ করতে পারবে।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের জন্যে ৫০ জন ভর্তির বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ৫০ জনই ভর্তি হবে। এরা ইতোমধ্যে অনলাইনে আবেদন করে ভতির জন্যে নির্বাচিত হয়ে গেছে। আর অনলাইনে আবেদনের সময়সীমা ছিলো গত ৩১ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। তিনি আরো জানান, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। এর আগেই শিক্ষক ও জনবল নিয়োগ হয়ে যাবে।’
প্রসঙ্গত চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির নানা প্রতিশ্রুতির মধ্যে চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ করার বিষয়টি ছিলো অন্যতম। সেটিও বাস্তবায়ন হয়ে গেলো। এ জন্যে চাঁদপুর জেলাবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডাঃ দীপু মনি এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
অপরদিকে,চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে প্রায় ৩১ একর ভূমিতে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ এ- হসপিটাল নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ভুমি অধিগ্রহনসহ সকল কাজ সম্পন্ন হলে এই স্থানেই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হবে।
নদীর পাড়ে মেডিকেল কলেজ করা হলে স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা পাবেন চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার লাখ লাখ মানুষ। কারণ নৌ-পথে রোগী নিয়ে আসার সুবিধা পাবে ৪ জেলার মানুষ। সড়ক পথেও আসার সুবিধা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ এ- হসপিটাল নির্মাণের কথা দিয়েছিলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এমপিকে দেখিয়ে বলেন, আপনাদের জনপ্রতিনিধি একজন চিকিৎসক। তিনি আমার কাছে আগেই চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কথা দিয়েছি, চাঁদপুরে মেডিক্যাল কলেজ করে দেবো। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা এবং কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েগেছে।
গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এডিসি রেভিউনিউ, গণপূর্ত প্রকৌশলী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রতিনিধি দল এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রনোয়ণ এবং উল্লেখিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।
মেডিকেল কলেজের জন্য নির্ধারিত স্থান ইসলামপুর গাছতলা নদী পাড় এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, তাদের এলাকার প্রায় ৩১ একর ভূমি অধিগ্রহনের কথা তারা লোকজনের কাছে শুনে আসছেন। কিন্তু তাদের সাথে এখন পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেননি। প্রায় ৩০ পরিবারের বসবাস ওই এলাকায়। এর মধ্যে দেওয়ান বাড়ির বসতঘরই বেশী। বাকী পরিবারগুলোর বসবাস বিচ্ছিন্ন।
ওই এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান পাঠান, শহীদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সরকার মেরিন একাডেমী করেছেন, তখনও আমাদের অনেক পৈত্রিক ভূমি চলেগেছে। এখন আবার মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করলে বসত ভিটাও থাকবে না। এ ধরনের কাজ আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’
অপরদিকে দেওয়ান বাড়ীতে রয়েছে প্রায় ২৫ পরিবারের বসত ঘর। তাদের মধ্যে আবুল বাশার দেওয়ান ও ওমর ফারুক দেওয়ান বলেন, ‘২৫ একর ভূমি অধিগ্রহন করলে তাদের বসত বাড়ীর সমস্যা হবে না। তবে এর বেশী অধিগ্রহন করলে তাদের বসতবাড়ী ছাড়তে হবে। এ বিষয়ে তারা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির একটি প্রকল্প। তাই আমাদের সকলের বিশেষ নজরে এনে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বর্তমানে নির্ধারণ করা স্থানে প্রায় ৩০টির মতো পরিবার রয়েছে। তাদের বিষয়টিও ভাবতে হবে। তারা যাতে জমির ন্যায্য মূল পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি প্রধান (চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ) রেজওয়ানুল হক পরিদর্শন কালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরসহ দেশের মোট ৫ জেলায় নির্মাণ করা অঙ্গিকার করেছেন। এসব জেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে চাঁদপুর ছাড়াও অন্য জেলার মধ্যে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী ও রাঙ্গামাটি রয়েছে।’
এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন-
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ ডা. জামাল সালেহ
করেসপন্ডেট