চাঁদপুর রেলওয়ে থানার আয়োজনে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, চুরি-সিনতাই, মাদক পাচার এবং রেললাইনে হাঁটা বন্ধে জনসচেতনতায় সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০মার্চ শুক্রবার বেলা ১২টায় চাঁদপুর শহরের রেললাইন সংলগ্ন ঘোড়ামাড়া আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুরাদ উল্লাহ বাহার।
তিনি বলেন, চলন্ত রেলে পাথর নিক্ষেপ একটি ভয়ঙ্কর ও জঘন্যতম অপরাধ। এতে করে অনেক যাত্রী পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এই ধরনের জঘন্যতম অপরাধ বন্ধ সমাজের সকল সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া রেললাইনে অনেকে হাঁটাচলা করেন এবং মোবাইলের হেডফোন কানে লাগিয়ে হাঁটেন। এতে করে যে কোন সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আর বলেন, রেলে মাদক পাচার, চুরি ছিনতাই বন্ধে রেল থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সকল অপরাধকে আমরা কঠোর হাতে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছি। তিনি রেল সংশ্লিষ্ট অপরাধ দমনে এলাকার সচেতন মহলের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর রেলওয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার মো. আতাউর রহমান,
চাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান দর্জী, দৈনিক চাঁদপুর সময় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কাজী মোহাম্মাদ ইব্রাহিম জুয়েল, চাঁদপুর রেলওয়ে থানার এএসআই দ্বীন মনি বড়ুয়াসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রসঙ্গত : চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেলপথে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ক্রমস ভয়ংকর রুপ ধারন করেছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাধারণ যাত্রীরা। কোনভাবেই এসব পাথর নিক্ষেপকারী দুস্কৃতিকারীদের নিভৃত করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ভয়াবহ এই পাথর নিক্ষেপের কারণে অনেক যাত্রী পঙ্গুত্বের জীবন যাপন করছে।
গত ৭ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তনগর ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপ ও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন বেশ কয়েকজন যাত্রী। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচীব কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল একই ট্রেনে তার ভগ্নিপতিকে নিয়ে চাঁদপুরে ফিরছিলেন। ঐ যাত্রির টিকিট নম্বর CTG0116429। তিনি জানান, ট্রেনটি চাঁদপুরের মৈশাদী রেল স্টেশনে আসলে একদল দুর্বৃত্ত ট্রেন যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এসময় এক নারী যাত্রীরও মোবাইল ছিনিয়ে নেন বলে তিনি জানান।
এরপর ট্রেনটি মৈশাদী স্টেশন পার হয়ে সামনে এগুতে থাকলে চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকা, গুচ্ছগ্রাম ও দর্জিঘাট এলাকায় আসলে বিক্ষিপ্তভাবে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। এসময় নারীসহ প্রায় ৫জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়। এরমধ্যে একটি পাথর এসে কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েলের পায়ে এসে আঘাত করে। এতে তিনিও মারাত্মভাবে আহত হন।
ঐ ঘটনায় আহত যাত্রী কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার চাঁদপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
এদিকে একই পরিস্থিতির শিকার চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ জানান, কিছুদিন পূর্বে তিনিও একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে পাথরের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। রেলওয়ের যাত্রীদের এমন নিরাপত্তাহীনতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন, এই রুটে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এসব যাত্রীদের উপর এভাবে পাথর হামলা ও ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ায় রেলওয়ের পাশাপাশি চাঁদপুরের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই চাঁদপুরের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এব্যাপারে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াতকারী কয়েকজন যাত্রীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম টেন যাতায়াত অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে চলন্ত ট্রেনে প্রায়ই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে যাত্রীরা হতহতা হলেও রেল কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না কোন যাত্রী। যার কারণে দুস্কৃতিকারীরা বার বার একই ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া রেলওয়েতে ছিনতাইকারীও বেশ সক্রিয় বলে জানা যায়। বিশেষ করে প্রতিটি স্টেশনে দুস্কৃতিকারীরা সব সময় ওঁৎপেতে বসে থাকে। সুযোগ পেলেই যাত্রীদের মোবাইল, ঘড়ি, হাত ব্যাগ, নগদ অর্থ সম্পদ কেড়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসবয় ঐসব দুস্কৃতিকারীরা যাত্রীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আহত করে। যাত্রীরা জীবনের ভয়ে সব কিছু দিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে রেল পুলিশের তৎপরতা না থাকার কারণে দিন দিন এসব ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
তাই সাধারণ যাত্রীরা ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জণ্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার আহবান জানান।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১০ মার্চ ২০২৩