চাঁদপুরে চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ

দীর্ঘ ছয় বছর পর চলতি বছরেই চাঁদপুরে আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বরে কাজ শুরু হবে। 

চাঁদপুর নদীবন্দর ও বিআইডব্লিটিএ কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির উপস্থিতিতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানান। 

তিনি জানান, চাঁদপুরে যে আধুনিক নৌ টার্মিনাল হওয়ার কথা, সেটার টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন সেটির মূল্যায়ন কাজ চলছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এখানে নৌবন্দর ও আধুনিক নৌ টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ‘চাঁদপুরে আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন হয়

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকা। শুরুতে প্রকল্পটি শুধু চাঁদপুর নদীবন্দর নির্মাণ নিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে এ প্রকল্পে চাঁদপুরের সঙ্গে ঢাকা (লালকুঠি ঘাট), বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল উন্নয়ন সংযোজন করা হয়। 

ফলে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ও মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ধার্য করা হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। ২০১৬ সালের পর কেটে গেছে ছয় বছর। প্রকল্পটি দীর্ঘ সময় ফাইলবন্দি থাকার পর চলতি বছরে এটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। 

চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা সদরঘাট টার্মিনালে যে সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে, চাঁদপুর নৌ টার্মিনালেও সে ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। 

২০০০ সালে হঠাৎ ডাকাতিয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বড় স্টেশনের পশ্চিম-দক্ষিণে তৎকালীন লঞ্চঘাটটি। এরপর ডাকাতিয়া নদীর ওপর আরেকটি ছোট টার্মিনাল নির্মিত হয়। কিন্তু সেই টার্মিনালে ডাকাতিয়া-মেঘনা নদীর ঘূর্ণিস্রোতের কারণে লঞ্চ যাতায়াত বিপজ্জনক হওয়ায় মাদ্রাসাঘাটে বিকল্প নৌ টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। 

গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী ঘাট হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অথচ ঘাটটিতে যাত্রীসেবার ন্যূনতম সুবিধা নেই। 

নেই যাত্রী ছাউনি, নেই বসার কোনো স্থান। পুরো চত্বরে খানাখন্দে ভরা আর রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে হয় যাত্রীদের। পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া যাত্রীদের বিকল্প নেই।

স্থানীয় বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ প্রকল্পটির নাম ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-১ (বিআরডব্লিওটিপি-১)’। 

ওই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফরহাদুজ্জামান জানান, প্রকল্পটি ২০১৬ সালের শেষের দিকে একনেকে অনুমোদন হলেও প্রকল্প অফিস ও জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করতে ২০১৭ সাল হয়ে যায়। প্রকল্পের জিওতে (গভর্নমেন্ট অর্ডার) নির্দেশনা ছিল কাজ শুরু করার পূর্বে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। 

‘কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে ২০১৭ পার হয়ে যায়। ২০১৭ সালের শেষের দিকে কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ দিলে তারা স্টাডি ও ডিজাইনের জন্যে দুবছর সময় চান। দুবছর পর ২০২০ সালের শুরুতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তা চার বছরে গড়ায়। তবে কনসালটেন্ট ফার্ম তাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করেছে। তারা স্টাডি শেষে ডিজাইনও জমা দিয়েছেন। আর এটি নির্মিত হলে পাল্টে যাবে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের বর্তমান দৃশ্য।’

স্টাফ করেসপন্ডেট, ২০ এপ্রিল ২০২২ 

Share