শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুরের চরাঞ্চল মানুষের জীবনমান বদলে দিচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ

যেখানে সূর্য্য পশ্চিম আকাশ থেকে অস্ত যাওয়া সাথে সাথে নেমে আসতো তিমির আধাঁর, চারদিকে নিরব নিস্তব্দতা, থাকতো না কোন কোলাহল এইছিল তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।

সেটি হচ্ছে নদীমাতৃক জেলা চাঁদপুরের চরাঞ্চল। এ চরাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে সৌর বিদ্যুৎ। এসব এলাকার মানুষের কাছে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো এক সময ছিল অসম্ভব একটি ভাবনা।

তারা সবধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে যুগ যুগ ধরে ছিল বঞ্চিত। কিন্তু সৌর বিদ্যুৎ বদলে দিয়েছে মতলব উত্তর উপজেলার বিশাল ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান।

সারাদেশের মানুষ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হলেও এই চরাঞ্চলের মানুষরা তখনো নির্বিঘ্নে জ্বালিয়ে যাচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ।

এই সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষরা এখন রাতের আধাঁরকে জয় করে ঘরে ঘরে আলো জ্বালাচ্ছেন। ঘরকে আলোয় আলোকিত করার পাশাপাশি নিজেদের সন্তানদের লেখা-পড়া করিয়ে খুবই উৎসাহী হয়ে উঠেছেন তারা।

সৌর বিদ্যুতের মাধমে চরাঞ্চলের মানুষরা এখন চালাচ্ছেন কম্পিউটার, টেলিভিশন, সিডি প্লেয়ার, ফ্যানসহ অনেক কিছুই এবং চার্জ করছেন মোবাইল, রিচার্জেবল ফ্যনসহ এ জাতীয় অনেক কিছু। বর্তমানে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের জীবনে ছোঁয়া লেগেছে আধুনিকতার।

এসব অঞ্চলে সরকার সকল উন্নয়নের সাথে প্রথম সারীতে সৌর বিদুৎতের ব্যাবহার রেখেছে বাধ্যতা মুলক। রাস্তা ঘাট, পূল কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা যাই নির্মান হচ্ছে এর সাথে বাধ্যতা মূলক সোলারের মাধ্যমে সৌর বিদুৎ বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছে সরকার।

মতলব উত্তর উপজেলায় গ্রামীণ শক্তি, রহিমা আফরোজ, রেডি, আইডিএফ, ফাউন্ডেশন, শক্তি ফাউন্ডেশনসহ ২০টির মতো সৌর বিদ্যুৎ কোম্পানী চরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে।

এক সময় সন্ধ্যা নামতেই চরাঞ্চলের মানুষদের খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমুতে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এগিয়ে আসে বর্তমান সরকারসহ স্থানিয় কয়েকটি এনজিও সংস্থা।

সরকারের পাশাপাশী এইসব এনজিউ সংস্থাগুলো কিছুটা সুলভ মূল্যে ওইসব এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়।
মতলব উত্তর উপজেলায় ব্র্যাক ও গ্রামীণ শক্তি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ২০০৩ সালের দিকে নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে সৌর বিদ্যুৎ বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে।

প্রথম দিকে তেমন সারা না পাওয়া গেলেও দিনে দিনে চরাঞ্চলের মানুষদের কাছে সৌর বিদ্যুতের কদর বাড়তে থাকে।

চরকাশিম বোরচরের আলহাজ্ব মো. সেলিম বাদশা, আ. রশিদ বাদশা ও জসিম গাজী জানায়, সৌর বিদ্যুতের কারনে এখন আমরা রাতে টিভি দেখতে পাচ্ছি। ছেলে-মেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারছে।

তারা আরো জানায়, সন্ধ্যার পর ভূতড়ে এলাকায় পরিণত হওয়া চরাঞ্চলের গ্রামগুলো এখন সৌর বিদ্যুতের আলোয়ে আলোকিত হয়ে উঠছে। চরাঞ্চলের মানুষ যেন নতুন জীবন পেয়েছে।

সৌর বিদ্যুৎ এলাকায় পৌঁছার পর চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জেলার চরাঞ্চলের রাজরাজেশ্বর, চর লগ্নীমারা, ইব্রাহীমপুর, চরকাশেম, মধ্যচর, চরউমেদ, চরকাশিম, বোরচর, ৬ষ্ঠ খন্ড বোরচর, চরওয়েস্টার, বাহাদুরপুর, চরজিংকিংসহ অন্যান্য চরে সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে।

সৌর বিদ্যুতের রহিমা আফরোজ কোম্পানীর ইউনিট ম্যানেজার আ. সাত্তার জানায়, সৌর বিদ্যুৎ অতি সুলভ মূল্যে স্থাপন করা যায়। জেলায় সর্বনিন্ম ১০ওয়ার্ড এবং সর্বোচ্চ ১৩০ওয়ার্ড পর্যন্ত সৌর বিদ্যুতের সোলার প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। আগে চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে জেলায় প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪শতাধিক সৌর বিদ্যুতের সোলার প্লান্ট বিক্রি হচ্ছে।

কয়েকটি চরাঞ্চলে ঘুরে দেখাযায় প্রতিটি বাড়ীর প্রতিটি ঘরের চালে সৌর বিদুৎতের সোলার লাগানো রয়েছে। শুধু তাই নয় চাঁদপুরের যতগুলো চর রয়েছে প্রায় সবগুলো চরেই এখন সৌর বিদুৎ দিয়ে আলোকিত করছে তাদের জিবন।

মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোসাদ্দেক হোসেন মুরাদ জানায়, সৌর বিদ্যুতের আলো জ্বলার কারনে চরাঞ্চলের সাধারন মানুষের জীবনটা দিনে দিনে বদলাচ্ছে। তাদের জীবনে এসেছে আধুনিকতার ছোয়া এবং সন্তানরা উৎসাহীত হচ্ছে লেখা-পড়ার প্রতি।

প্রতিবেদক-খান মোহাম্মদ কামাল
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৭ : ৩৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার
এইউ

Share