চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীভাঙ্গন জেলা। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীভাঙ্গন দেখা দেয়ার ফলে চাঁদপুরের ব্যবসা বাণিজ্য, যাতায়ত, কৃষি ও শিল্প-কলকারখানার অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে রয়েছে। এতে জীবন ধারণের ক্ষেত্রে মানুষের অনেক কিছুরই পট-পরিবর্তন হয়েছে।
চাঁদপুরের ৩ টি উপজেলার ২০ ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনের কবলে পতিত। মেঘনানদীর বুকে ও পশ্চিম তীরে অসংখ্য দ্বীপবিশেষ চর রয়েছে। এর মধ্যে ১১ টি চরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। চরাঞ্চলগুলিতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস। এদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়ত ব্যবস্থার কথা ভাবলে ব্যথা অনুভব হয়।
অতীতের চেয়ে বসবাসরত ঘরগুলির অবয়ব পরিবর্তন হলেও শিক্ষা, কৃষি, যাতায়ত ও চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি।
ফলে তাদের বর্তমান জীবন-যাত্রার মান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আশার আলো প্রসারিত হচ্ছে না। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময় পরিবেশে তাদের জীবন চলছে।
গ্রীস্মের প্রচন্ড রৌদ্র তাপে, শীতের হিমেল হাওয়ায় ও বর্ষার রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে এবং শরতের পরশে এদের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। ঘাত-প্রতিঘাত আর বেঁচে থাকার জন্য এরা প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য উৎপাদনে তাদের নিরলস পরিশ্রমে উৎপন্ন হচ্ছে ধান, পাট, মরিচ, তিল, সরিষা, সয়াবিনসহ নানাবিধ শাক-সবজি, ফল-মূল ও তরিতরকারী। কিন্তু অনেক সময় তারা তাদের উৎপন্ন ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না।
নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলবাসীর অপর একটি জীবিকার মাধ্যম হচ্ছে মৎস্য শিকার। এ ক্ষেত্রে তাদের ভাগ্যের ওপর বসে থাকতে হয়। কেননা ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা কিংবা কাল বৈশাখি তান্ডব ও ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে তাদের অলস জীবন কাটাতে হয়।
যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সকল পণ্যই নদী পথে পরিবহন করতে হয়। ফলে তাদের কাজের সময় ও অর্থ দুটিই অপচয় হয়।
প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের সমস্যার অন্ত নেই।
ফলে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে কাজে-কর্মে লেগে পড়ে। অনেকেই তাদের মেয়েদেরকে ১৫ বছর বয়স হলেই বিয়ে দেন। কোথায় ও কিভাবে তারা ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া জন্মনিবন্ধনের সনদ পেয়ে যান – তা’আমাদের বোধগম্য নয়।
জন্মনিবন্ধনের সনদ প্রাপ্তির দূর্বল দিকটি অবশ্যই বন্ধ করার পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ছে। এবারের নির্বাচনে নতুনভাবে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে জন্মনিবন্ধনের সনদ প্রদানের ব্যাপারে কঠিন অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার বাড়বে এবং নানা জটিল রোগের প্রসারও ঘটবে।
চরাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারে সৌরবিদ্যুৎ চালিত বাতি জ্বলছে । এটা শুভ লক্ষণ হলেও চড়াসুদে এসব সৌরবিদ্যুৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের প্রদান করছে। চাঁদপুরের ওই সব এলাকায় জনসংখ্যানুপাতে কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় চরম ভাবে তারা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জ্বর,ডায়রিয়া,আমেশয়,জন্ডিস,গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর চিকিৎসা, নানা প্রকার জখম,চক্ষুরোগ, জীব-জন্তুর আক্রমণে আক্রান্ত রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি রোগের জন্য ছুটে আসতে হয় জেলা বা উপজেলা সদর হাসপাতালে।
এতে তাদের যাতায়ত ভাড়া ও ব্যবস্থাপত্রের ফি প্রদান করেই তাদের পকেটে আর টাকা থাকে না। স্থানীয় ঔষধের দোকানগুলিতে নিম্মমানের ঔষধ থাকার কারণে অনেক সময় বেশি দামে ঔষধ কিনেও রোগ নিরাময় হয়না।
জনসংখ্যানুপাতে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজন ফ্লাড সেন্টার , কমিউনিটি ক্লিনিক, উৎপন্ন ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত,যাতায়তের জন্য রাস্তা ঘাট নির্মাণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে চরাঞ্চলবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
সম্পাকীয় : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:০০ পিএম, ২৭ মে ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ