চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর বিধ্বস্ত থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত চার দিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন ৯০ ভাগ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রাত পার করছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত ও তীব্র বাতাসে হাজীগঞ্জে গাছপালা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও শীতকালীন আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে সিত্রাং এর প্রভাবে রোববার বিকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত এবং বেলা তিনটার পর ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দমকা হওয়া বইতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হলেও তীব্র বাতাস বয়ে যায়।
জানা গেছে, দুই দিনের বৃষ্টিতে মাটি নরম হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যার পর তীব্র বাতাসে উপজেলার কম-বেশি প্রায় সব এলাকায় গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কোথাও গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে, কোথাও গাছ উপড়ে যায়। আর গাছপালা উপড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের (ক্যাবল) অনেক ক্ষতি হয়।
আবার বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়ে। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের চার্জ, নেটওয়াক ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার ফলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বা উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকা বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পৌছাতে দেরি হয়েছে।
এদিকে তীব্র বাতাসে অনেকের বসতঘরেও গাছ উপড়ে পড়ে। এতে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও কোন প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও টানা বৃষ্টি ও বাতাসে শীতকালীন আগাম সবজি ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে এখন পর্যন্ত তির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন রান্ধুনীমূড়া গ্রামের সিরাজ মিয়া হাজী বাড়ির মো. মনিরুজ্জামান জানান, তাদের বাড়িতে প্রায় ৩০/৩৫টি বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে। এসব গাছে কয়েকশত পাখির বসবাস ছিল। তাদের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি পাখিরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বক পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়িতে ৬ একর সম্পত্তি। যেখানে অনেক গাছপালা রয়েছে। এসব গাছে কয়েক শতাধিক পাখির বসবাস। ঝড়ে এবং গাছ উপড়ে পড়ে প্রায় সব পাখির বাসা ভেঙ্গে পড়ে। এতে অন্তত শতাধিক পাখি আহত হয় এবং পাখির ছানা নিচে পড়ে। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন আহত বক ও ছানা ধরে নিয়ে যায়।
এদিকে শীতকালীন সবজির ক্ষতির বিষয়ে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাংবাদিক হাবিবুর রহমান জানান, দক্ষিণ বলাখাল, নিলাম বলাখালসহ ডাকাতিয়া নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকা এবং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উচ্চঙ্গা ও অলিপুর গ্রামে শীতকালীন আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আতিকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রভাবে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এবং খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে লাইন মেরামত করে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনতে মঙ্গলবার ভোর থেকে বিদ্যুতের লোকজন কাজে নেমে পড়ে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে (মঙ্গলবার রাত ৮টায়) বিদ্যুৎ বিচ্ছিন এলাকার বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়নি। আমাদের লোকজন দিন-রাত কাজ করছে। আশা করি আজ রাতের মধ্যেই সকল স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, সিত্রাং এর প্রভাবে প্রায় সব জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। সকাল থেকেই সেসব গাছ সরানোর কাজে লেগে পড়েন স্থানীয়রা। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে।
ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, সব জায়গায় খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এখনো ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা হয়নি। কারণ হিসাবে তিনি জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকের মোবাইলে চার্জ নেই। যার ফলে অনেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। আশা করি বৃহস্পতিবার এর মধ্যেই আনুমানিক ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করতে পারবো।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৬ অক্টোবর ২০২২