Home / সারাদেশ / ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকুরি পেল তিন শ’ তরুণ-তরুণী
Polic-Comilla

ঘুষ ছাড়াই পুলিশে চাকুরি পেল তিন শ’ তরুণ-তরুণী

সত্যি সত্যি অবশ্যই সত্যি। আমাকে এক টাকাও দিতে হয় নি। আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে কনস্টেবল পদে চাকুরি পেয়েছি। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পুলিশের চাকুরি পেতে এক টাকাও লাগে না। এভাবেই কুমিল্লা পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া কুমিল্লার দেবীদ্বারের রাজামেহেরের নাসরিন আক্তার তার আনন্দঘন অনুভূতি জানান।

নাসরিন আক্তারের মতোই কোনো ঘুষ না দিয়ে, কোনো প্রকার টাকা পয়সা খরচ না করে, তদ্বির না করে কুমিল্লা জেলা পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পয়েছেন ২শ ৯৮ জন নারী পূরুষ। চলতি বছর কুমিল্লা জেলায় পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল’ নিয়োগ পরীক্ষায় ২ হাজার ৩শত ৪৯ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ৪ শত ২০ জন। তাদের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে কনস্টেবল পদে চাকুরি পেয়েছেন ২ শত ৯৮ জন। এদের মধ্যে কৃষক পরিবারের ৯৭ জন ও দিনমজুর পরিবারের ৩৭ জন সাধারণ কোটায় চাকুরি পেয়েছেন।

এ ছাড়াও চাকুরি পেয়েছেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীর ১১জন, প্রবাসীর ২১ জন ও সরকারি চাকুরিজীবীর ৩২ সন্তান। এভাবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কনস্টেবল হতে পেরে যারপরনাই খুশি তারা। অভিভাবকদের কাছে ঘটনাটি এখনো ধাঁধার মতো। আবেগে অনেকেই কেঁদে ফেলেন। পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য একটি অবলম্বন খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অনেকে।

শারমিন আক্তারের বাবা আবদুল হালিম জানান, আমার মেয়ে যোগ্যতা দিয়ে চাকুরি পেয়েছে। এক বেলা খেলে আরেক বেলা কষ্ট করে খেতে হয়। চাল আনলে মাছ আনতে পারি না। আল্লাহর রহমত ও প্রধানমন্ত্রীর উছিলায় চাকুরিটা পেয়েছে। খুব খুশি, কারণ এক টাকাও লাগে নি।

কনস্টেবল পদে চাকুরি পাওয়া কুমিল্লার বুড়িচংয়ের মোহাম্মদ আসিফ জানান, ভালো লাগছে নিজের যোগ্যতায় চাকুরি পেয়ে। লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা ও মেডিক্যালে উত্তীর্ণ হয়েছি বলেই আজ চাকুরি পেয়েছি। এর জন্য পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেনের সততাকে স্যালুট জানাই।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি চাকুরিতে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অংশ হিসেবে নানাভাবে প্রচারণা চালায় কুমিল্লা পুলিশ। কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় কেনো চক্রের সাথে লেনদেন না করার জন্য অনুরোধ জানান তারা।

ঘুষ ছাড়া ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি পাওয়া কনস্টেবলরাও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে বলেছেন, চাকুরি জীবনে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে চান। সততার দৃষ্টান্ত রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন ও পুলিশের টিম কুমিল্লাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে নি অভিভাবক ও চাকুরি পাওয়ারা।

বুধবার কুমিল্লার পুলিশ লাইন্সে শহীদ আর.আই এ বি এম আব্দুল হালিম মিলনায়তনে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত কনস্টেবলদের দিকনির্দেশনা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আলমগীর হোসেন, অতি. পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতি. পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. সাখায়াত হোসেন, অতি. পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভির সালেহীন ইমন ও জেলা পুলিশের সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

নিয়োগপ্রাপ্তদের সততার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, সাধারণ মানুষের সুখ দু:খে পাশে থাকতে হবে। মানুষের কল্যাণ করতে হবে। সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, গত কয়েকবছর ধরে আমরা এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি যে, যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়। যাতে দালালের খপ্পড়ে না পড়ে। এবার এর প্রভাবটা বেশি পড়েছে। নতুন আইজিপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা ছিল যাতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়।

খুবই দরিদ্র, দিন মজুর ও কৃষক পরিবারের চাকুরি পাওয়া সন্তান ও অভিভাবকরা চান এ স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হোক সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া।

(কালের কন্ঠ)