মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার একজন আসামীর সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু জানিয়েছেন, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ওঠার পর এখন সেটির তদন্ত চলছে। তাই আপাতত তাকে মামলা পরিচালনা না করার জন্য বলা হয়েছে আর মামলার সব নথিপত্র প্রসিকিউশনে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ, গত বছরের ১৮ই নভেম্বর তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) আর পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর (অব.) ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে টেলিফোন করে গোপনে বৈঠক করতে চান। এর পরদিন ১৯শে নভেম্বর তিনি গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ওয়াহিদুল হক, তার স্ত্রী ও একজন স্বজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি আসামির কাছে ঘুষও চেয়েছেন।
সেই বৈঠকের কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করেন ওয়াহিদুল হক।
গত ২৪শে এপ্রিল মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তার মোবাইল ফোনে সেই রেকর্ড পায় পুলিশ। তাদের কাছ থেকে তদন্ত সংস্থা সেটি জানতে পারে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল একজন প্রসিকিউটর।
সেই বৈঠকের তথ্যপ্রমাণ ও অডিও রেকর্ড চীফ প্রকিকিউটরের কাছে দেয়ার পর প্রথমে এই মামলা পরিচালনা থেকে তুরিন আফরোজকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন এবং তার কাছে থাকা নথিপত্র চেয়ে পাঠান। পাশাপাশি এ ঘটনায় একটি তদন্তও শুরু করা হয়েছে।
বুধবার এসব অভিযোগের একটি কপি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়েও।
মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে চালানো গণহত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় ১৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৯৭১ সলের এপ্রিলে বদলি হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। অভিযোগ গঠনের পর ১১ই নভেম্বর এই মামলার প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দেয়া হয় তুরিন আফরোজকে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি কোনো কথা বলতে চাননি ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
তবে ফেসবুকে তার নিজস্ব পেজে একটি বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমি এখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে বহাল আছি। আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি।’
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ৮(২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটারের একজন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেব কাজ করার এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং যে কোন মামলাতে তদন্ত করার এখতিয়ার আমার আছে। আর তদন্ত করতে গেলে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সুতরাং আমি তদন্তের স্বার্থে যে কোন প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করতে পারি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমি এই পর্যন্ত প্রসিকিউটর হিসেবে যা কিছুই করেছি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিলেন । আমাকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়।’
২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তুরিন আফরোজ। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আজমের মামলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি পরিচালনা করেছেন।