সারাদেশ

‘ঘর-বাড়ি বাঁচামো না ঈদ করমো’

‘ঘর-সংসার তিস্তা খ্যায়া ফ্যলাইল বাহে, হামার ফির কিসের ঈদ। বাড়ির অর্ধেকেরও বেশী নদীত, বাকি কোনাও নদীত যাওয়ার পথে।

হামার কপালোত ঈদের আনন্দ আল্লায় ল্যাখে নাই বাহে। তিস্তার ভাংগন থাকি ঘর-বাড়ি বাঁচামো না ঈদ করমো। চাইর চাইরটা যুয়্যান চেংরি নিয়্যা কটাই যামো।’

এভাবেই নদী ভাঙ্গা কষ্টের কথা বলছিলেন তিস্তার ভাঙ্গন কবলিত রাজারহাট উপজেলার তৈয়ব খাঁ গ্রামের জোসনা বেগম (৪৫)।

স্বামী রফিকুল ইসলাম (৫৭) ও চার মেয়েসহ ৬ জনের সংসার তার। যাওয়ার কোন জায়গা নেই। দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে পরিবারটিকে। এবার যাবে কোথায়?

তিস্তা নদীর প্রবল ভাঙ্গন চলছে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, নাজিমখান ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ, রতিদেব, মন্দির, রামহরি, চর খিতাব খাঁ গ্রাম জুড়ে। ইতিমধ্যে এসব এলাকায় নদীভাঙ্গনে শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে আরো শতাধিক পরিবার।

শনিবার (২৪ জুন) রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরের আনন্দ তো দূরের কথা, নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত মানুষের ভিটে-মাটি হারানোর হাহাকার আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। বিষন্নতার ছায়া সবার চোখে মুখে।

ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে স্কুল, মন্দির, মসজিদ, ঘর-বাড়ি, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ইতিমধ্যে ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে তৈয়ব খাঁ বাজার।

অনেকেই বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্রসহ শেষ সম্বলটুকু সরিয়ে নিতে ব্যস্ত। অনেকে বাড়ি সরাতে সরাতে সর্বশান্ত। কারো কারো বাড়ি তিস্তা গ্রাস করেছে ২/৩ বার। এখন কোথায় যাবে তা জানা নেই। কেউ কেউ নদীর পাড়েই খোলা আকাশের নীচে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে সর্বশ্ব হারিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছেন অন্যের জমিতে।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মোসলেব উদ্দিন (৫৮) জানান, তার শেষ ঠিকানা ও শেষ সম্বল ৪টি ঘরসহ বাড়ির পুরোটাই তিস্তা নদীতে চলে গেছে। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন জানা নেই। ইতিপুর্বে আরো দুই দুইবার বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। তিনি এখন সর্বশান্ত।

একই এলাকার ভাঙ্গন কবলিত মনোয়ারা বেগম (৫৫), মকুল মিয়া (৪০), মোস্তফা কামাল (৫০), সুরুজ্জামাল মিয়া (৫২), নুর জামাল (৫৬) সহ আরো অনেকে বলেন, ‘সবায় এলা বাপ-দাদার ভিটা ছাড়া, সউগ সর্বনাশা তিস্তা গিলি খাইলে বাহে। তিস্তা যে হারে ভাইংবার নাইগছে, তাতে ঈদের দিনও বাড়ি-ঘর টানা খাইবে। হামারগুল্যার দিন কাইটপার নাগছে আতংকে।’

রাজারাহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিন ধরে তিস্তা নদীর প্রবল ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। সর্বশান্ত মানুষ ভাঙ্গন আতংকে দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু সালে মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আবুল হাসেম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রফিকুল ইসলাম। ভাঙ্গন কবলিতদের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, তিস্তার ভাঙ্গন রোধে জরুরি কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কাঠ-বাঁশের পাইলিং দিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬: ০০ পিএম, ২৫ জুন ২০১৭, রোববার strong>
ডিএইচ

Share