দেশের অনেক অঞ্চলেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছে মানুষ। কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্যই আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের ভুগতে হচ্ছে বেশি। মৌসুমি জ্বরের চিকিৎসা চললেও জনস্বাস্থ্যবিদেরা অ্যাডিনোভাইরাসের আশঙ্কা করছেন।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এবারের ফ্লু ভাইরাসের সঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই হয়তো মানুষ বেশি ভুগছে। সাধারণত ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে যত দিন লাগে, অ্যাডিনোভাইরাসের ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। ভারতে যেহেতু রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে, বাংলাদেশে এটি প্রবেশ করেনি—সেটি বলা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, দেশে বর্তমানে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ থেকে এই আশঙ্কা করাই যায় যে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভারতে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসা, ভ্রমণ, ব্যবসাসহ নানা কারণে বাংলাদেশের মানুষের সেখানে নিত্য যাতায়াত রয়েছে। করোনাভাইরাসের মতো অ্যাডিনোভাইরাসও আক্রান্ত একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে। সরকারের উচিত এখনই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে এই সময়ে ভাইরাসের দাপট বাড়ে। এটি সাধারণত ফ্লু ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপ কতটা হবে, তা আগে থেকে পুরোপুরি বোঝা যায় না। প্রতিবছরই লক্ষণ-উপসর্গ পরিবর্তন হতে পারে। তবে শীতের শেষে এমন জ্বর হওয়া স্বাভাবিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সংক্রমণের পেছনে আবহাওয়ার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এখন যেহেতু দিনে গরম, আর রাতে ঠান্ডা—তাই তাপমাত্রার পার্থক্যের ফলে এই জাতীয় সমস্যা বাড়ছে। আবার অনেকে গরমের কারণে অফিসে বা বাড়িতে এসি চালিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা অনেকটা থাকছেই। পুরোপুরি গরম পড়ে গেলেই আর এই ভাইরাসের প্রভাব থাকবে না। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বিভিন্ন শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে কয়েক শ শিশু আসছে। কাশির কারণে অনেক শিশু দুর্বল হয়ে পড়ছে। কাশির সমস্যা কারও ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহ বা তারও বেশি স্থায়ী হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট জানান, জ্বর, গলাব্যথা, কাশি নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। এদের মধ্যে কারও কারও অবস্থা খারাপ। কাশি থেকে ব্রংকাইটিস এমনকি নিউমোনিয়াও হচ্ছে অনেকের। তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন অনেক শিশু পাচ্ছি, যারা ভাইরাসজনিত সর্দিকাশি, জ্বরে আক্রান্ত। কারও কারও আবার গলাব্যথা থাকছে। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রথাগত চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যেমন জ্বরের জন্য জ্বরের ওষুধ, সর্দির ক্ষেত্রে সব সময় নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। গলাব্যথা হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে।’
শিশুদের পাশাপাশি সব বয়সীরা এই মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হলেও অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের বেশি ভুগতে হচ্ছে। কাশির দমকে কারও কারও অবস্থা একেবারেই কাহিল। রাতে পাল্লা দিয়ে কাশি বাড়ায় অনেকে ঘুমাতে পারছেন না। তবে আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেয় সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, মৌসুমি ফ্লু ভাইরাসের কারণে এই সময়ে এমনটি হয়ে থাকে। তবে একেক মৌসুমে ফ্লুর একেক রূপ দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনোভাবেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া যাবে না।’
টাইমস ডেস্ক/ এএস/ ১৬ মার্চ ২০২৩