রাজনীতি

গ্রেফতার হতে পারেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা

হার্ডলাইনে যাচ্ছে পুলিশ : ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গ্রেফতার ও তল্লাশিও বেড়েছে।

সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে পুলিশ। রাজধানীসহ সারাদেশের অস্থিরতা, খুন-ছিনতাই-নাশকতা বন্ধে ধরপাকড়সহ সুনির্দিষ্ট কার্যপরিকল্পনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে- বিদেশি নাগরিক, পীর ও পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা আর সর্বশেষ হোসনি দালানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর হার্ডলাইনে যাচ্ছে পুলিশ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গ্রেফতার ও তল্লাশিও বেড়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, পূর্বের বিভিন্ন মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামিগুলোকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। যারা বাইরে ঘুরছেন তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দেশের বিমানবন্দরগুলোতেও দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।

পুলিশের হার্ডলাইনের অংশ হিসেবেই গাবতলীতে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হত্যাকাণ্ডের পরদিন বগুড়া থেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ২১ জনকে আটক করা হয়েছে।

রোববার সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয় নাশকতা মামলার আসামি ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুকে। ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুমের ছোট ভাই এম এ মতিনকেও আটক করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার তথ্য, যোগাযোগ-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে এসব হামলার সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন। ইটালিয়ান ও জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিএনপি নেতাদের সন্দেহ করছে পুলিশ। সম্প্রতি এএসআই ইব্রাহীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সময় আটক মাসুদকে জামায়াতের কর্মী দাবি করে পুলিশ। সব মিলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে তাদের যোগসূত্রতা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতা যারা ভাঙচুরসহ নানা মামলার আসামি তাদের আটক করা হতে পারে।

ইতোমধ্যে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতে তল্লাশি ও গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।

পল্টন থানা বিএনপির এক নেতা জানান, ‘রাজধানীর পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, গুলশান, নিকেতন এলাকায় বিএনপির কয়েকজন নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে সেখানে বিএনপি নেতারা ছিলেন না বলে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সারাদেশে বিএনপির অনেক কর্মীর বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে।’

দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দল থেকে জানা গেছে- এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ততা খুঁজতে গ্রেফতারের একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আটকের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এই তালিকার শীর্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের হার্ডলাইনে যাওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘উপযুক্ত তদন্ত ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করলে বিচারকে প্রভাবিত করা হয়। যারা সত্যিকারের দোষী তাদেরকে শাস্তি দেয়া হোক। সরকার সেটা না করে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।’

তবে বিশেষ কোনো দলের নেতাদের হয়রানি প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

তিনি বলেন, ‘তদন্তের অংশ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তারা আইনসিদ্ধভাবে কাজ করছেন। এসব তদন্তকাজ যাদের বিপক্ষে যায় তারাই এটাকে ‘হয়রানি’ বলেন। যদি সত্যিই তারা মনে করেন যে এটা হয়রানি, তাহলে তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিতে পারেন।’

বিভিন্ন মামলার তদন্তে আগেভাগেই বিএনপির নাম জড়ানোর বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খুনিকে শনাক্তের আগে মন্তব্য করা মানে প্রকৃত খুনিকে আড়াল করা। তদন্তের আগে খুনের সঙ্গে ‘অমুকের হাত আছে’ বলা মানে মূল ঘটনাকে আড়াল করা।

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:৪৯ পিএম,২৫ অক্টোবর ২০১৫, রোববার

 এমআরআর

Share