Home / সারাদেশ / গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া

গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া

ফেনী করেসপন্ডেন্ট :

ফেনীতে হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা নাশকতার মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছাড়া হয়েছেন বিএনপি-জামায়ায়াতের সহস্রাধিক নেতাকর্মী।

বিরোধী জোটের অনির্দিষ্টকালের হরতাল অবরোধকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থানে নাশকতায় জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জামায়াতের আমীরসহ ২৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক হাজার নেতাকর্মীর নামে জেলার ছয়টি থানায় অন্তত ১২টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এসব ঘটনায় আটক বিএনপির সভাপতি অ্যাড. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার ও জেলা জামায়াতের আমীর একেএম সামছুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও জামিন নিয়ে বের হতে গেলে বারবার জেল গেইট থেকে আটক হচ্ছেন। এতে জেলা বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা গা ডাকা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৫ জানুয়ারি শহরের ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বরে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে আহত হয় ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিক ও হৃদয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ মামলায় শহর শিবিরের শিক্ষা সম্পাদক আবু তৈয়ব ও যুবদল কর্মী বোমা আজিমকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়ায় হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেলা যুবদলের সভাপতি গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত, সাধারণ সম্পাদক এস এম সালাহ উদ্দিন মামুন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি কপিল উদ্দিন মামুন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েল, জেলা যুবদলের সহ-প্রচার সম্পাদক আলী হায়দার রাসেল পাটোয়ারী, সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারীসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সহস্রাধিকের নামে মামলা দায়ের করে ফেনী মডেল থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় ওই দিন ধলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করা হয়।

পরদিন ৯ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে ফেনী শহরের এসএসকে সড়কের এসি মার্কেটের সামনে নেজারত ডেপুটি কালেক্টরের (এনডিসি) গাড়িতে বোমা হামলার ঘটনায় তিন ম্যাজিস্ট্রেট আহত হয়। এ ঘটনায় তার ড্রাইভার কাম অফিস সহকারী জিয়াদ হোসেন বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিষ্টার, জেলা জামায়াতের আমীর একেএম সামছুদ্দিনসহ যুবদল-ছাত্রদল ও শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় জেলা জামায়াতের আমীর একেএম সামছুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

১৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়।

১৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী বাইপাস অংশে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ ঘটনায় জেলা সাইবার ইউজার দলের আহ্বায়ক ও ছাত্রদল নেতা শরিফুল ইসলাম রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়।

২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার দাগনভূঞা উপজেলার কুমারপুলে সিএনজি চালিত অটোরিকশা পেট্টলবোমায় চারজন অগ্নি দগ্ধের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক অজ্ঞাত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পৌর জামায়াতের আমীর গাজী সালেহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২৩ জানুয়ারি শুক্রবার শহরতলীর কালিপাল এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় যুবদল-ছাত্রদলের ২৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

৩১ জানুয়ারি শনিবার মহাসড়কের মোহাম্মদ আলী বাজার সংলগ্ন দুলা মিয়া রাস্তার মাথায় হিউম্যান হলারে (ইমা পরিবহন) পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় শর্শদী ইউনিয়ন বিএনপি-জামায়াতের ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড শিবির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

১ ফেব্রুয়ারি রোববার শহরের টাংক রোডের খেজুর চত্বরে গাড়িতে আগুন ও ভাঙচরের ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও শিবিরের ১৯ জনের নাম উল্লেখ মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই দিন দুপুরে অভিযান চালিয়ে ১২ শিবির নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। একই দিন পুলিশ অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় আটক ১২ শিবির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই দিন রাতে সোনাগাজীতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলমসহ ১৫ নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

২ ফেব্রুয়ারি সোমবার ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠান নগর বাজারে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় অগ্নি সংযোগের ঘটনায় তিন জনের নাম উল্লেখ করে মামল দায়ের করা হয়।

এ বিষয়ে সদ্য জামিনে মুক্ত হওয়া জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. আবু তাহের চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ফ্যাসিস্ট এ সরকার গণতন্ত্র মানেনা বিরোধী নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, হয়রানির উদ্দেশ্যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা আছে এবং জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আইন তার নিজ গতিতে চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, ২১ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার ০৬ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি