২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচআনি গ্রামের আতিকের পরিবার হামলাকারীদের সবোর্চ্চ দাবি করেন। চার সন্তান নিয়ে দুঃখে-কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন আতিকের বিধবা স্ত্রী লাইলী বেগম (৫৪)।
বড় মেয়ে তানিয়া আক্তারের (২৫) আর্থিক দৈন্যদশার জন্য এইচএসসি পাসের পর লেখাপড়া থেমে যায়। ফলে ৫ বছর আগে তার বিয়ে হয়ে যায়। বড় ছেলে মিথুন (২২)। চাকরি করার কারণে নারায়ণগঞ্জে উম্মুক্ত কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে সংসার চালায়। মেজ ছেলে মিন্টু (২০) অষ্টম শ্রেণিতে পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। সে বাড়িতে থাকে। ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ছোট ছেলে শাকিব (১৬) স্থানীয় পাঁচআনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
২১ আগস্ট শনিবার বিকেলে সরেজমিন আতিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চৌ-চালা ঘরে তার স্ত্রী লাইলী বেগম চার সন্তান নিয়ে থাকেন। আতিকের স্ত্রী লাইলী জানান, ২১ আগস্ট আসলেই সাংবাদিকরা খোঁজ-খবর নেন। এ ছাড়া আর কেউ এই পরিবারের খোঁজ-খবর নেন না।
আতিকুর রহমানের বড় ছেলে মিথুন বলেন, আমাদের একটি চাকরির প্রয়োজন। আমি এবং আমার বোন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ওয়াসার কনস্টেবল পদে দরখাস্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের ভাইবোনের চাকরির ব্যবস্থা করতেন তাহলে আমরা একটু সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারতাম।
তানিয়া আক্তার জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে ১ লাখ, তারপর সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ, এফডিআর-এর জন্য ২০ লাখ এবং নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আর কোনো সাহায্য আমরা পাইনি।
স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, আমার স্বামীর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাই। আর যেন কোনো স্ত্রীর তার স্বামীকে অল্প বয়সে হারাতে না হয়।
আতিকের মা খোরশিদা বেগম জানান, ১৭ বছর যাবৎ ছেলের জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিয়েছি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানাই। আমার সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেন যেতে পারি।
মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জয় জানান, ২০ আগস্ট বাদ জুমা মরহুম আতিকুর রহমানের রূহের মাগফেরাত কামনায় পাঁচআনি জামে মসজিদে যুবলীগ ও পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেই ভয়াল হামলায় মারা যান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। আহত হন সাংবাদিকেরাও। আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনও স্লিন্টারের আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচআনি গ্রামের আতিকুর রহমান ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ঢালাই শ্রমিকের কাজ করতেন। শ্রমিক লীগের সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি যোগদান করেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেদিন তাকে জীবন দিতে হয়েছিল ঘাতকদের গ্রেনেড হামলায়। এদিকে শনিবার বাদ আছর ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা,মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করেছে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগ।
নিজস্ব প্রতিবেদক