২১ আগস্ট এলেই তাদের খোঁজে আসেন প্রথমে সাংবাদিকরা। তারপরই একটু তাদের খোঁজখবর নেওয়া হয়। এরপর আর কেউ তাদের খোঁজখবর নেননা এমনটিই আক্ষেপ করে বল্লেন ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আতিকের স্ত্রী,সন্তান ও আতিকের মা।
নিহত আতিকের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচআনি গ্রামে।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিউনিতে গ্রেনেড হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন নিহত আতিকের বৃদ্ধা মা খোরশিদা বেগম ও আতিকের স্ত্রী লাইলী বেগম।
চার সন্তান নিয়ে দুঃখে কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন আতিকের বিধবা স্ত্রী লাইলী বেগম (৫৩)।
বড় মেয়ে তানিয়া আক্তারের (২৪) আর্থিক দৈন্যদশার জন্য এইচএসসি পাসের পর লেখাপড়া থেমে যায়। ফলে ৩ বছর আগে তার বিয়ে হয়ে যায়। বড় ছেলে মিথুন (২১) সরকারি তোলারাম কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে সংসার চালায়। মেজ ছেলে মিন্টু (১৯) অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট ছেলে শাকিব (১৬) স্থানীয় পাঁচআনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন আতিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চৌ-চালা ঘরে তার স্ত্রী লাইলী বেগম চার সন্তান নিয়ে কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। লাইলী জানান, ২১ আগস্ট আসলেই সাংবাদিকরা খোঁজ-খবর নেন। এ ছাড়া আর কেউ এই পরিবারের খোঁজ-খবর নেন না।
আতিকুর রহমানের বড় ছেলে মিথন বলেন,আমাদের একটি চাকরির প্রয়োজন। আমি এবং আমার বোন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অধীনে ওয়াসার কনস্টেবল পদে দরখাস্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের ভাইবোনের চাকরির ব্যবস্থা করতেন তাহলে আমরা একটু স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারতাম।
তানিয়া আক্তার জানান,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে ১ লাখ, তারপর সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ, এফডিআর-এর জন্য ২০ লাখ এবং নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আর কোনো সাহায্য আমরা পাইনি।
স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, আমার স্বামীর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাই। আর যেন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে অল্প বয়সে হারাতে না হয়।
আতিকের মা খোরশিদা বেগম জানান, ১৬ বছর যাবত ছেলের জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিয়েছে। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানাই। আমার সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেন যেতে পারি।
মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জয় জানান, ২১ আগস্ট বিকালে ইউনিয়ন যুবলীগের উদ্যোগে মরহুম আতিকুর রহমানের রূহের মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ইকবাল হোসেন জয় বলেন,১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশের আরো একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের নাম বিভীষিকাময় ২১ শে আগষ্ট। সেদিন রক্তগঙ্গায় ভেসেছিলো বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কালো রাজপথ, আর্তনাদ আর আহাজারিতে স্তব্ধ হয়েছিলো পুরো বাংলাদেশ। জীবনের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আগলে রেখেছিলেন আত্মত্যাগকারী অকুতোভয় নেতা-কর্মীর দল। ২১শে আগষ্টের ভয়াল থাবায় জীবনদানকারী আইভী রহমানসহ নিহত সকল শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
উল্লেখ্য, আতিকুর রহমান ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ঢালাই শ্রমিকের কাজ করতেন।আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি যোগদান করেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেদিন তাকে জীবন দিতে হয়েছিল ঘাতকদের গ্রেনেড হামলায়।
প্রতিবেদক:কামাল হোসেন খান,২১ আগস্ট ২০২০