পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যাত্রী সংকটের কারণে দিনের বেলায় চলাচলরত বিলাসবহুল স্লিপার কোচ গ্রীন লাইন-৩ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। ১৫ যাত্রী এসে বন্ধের বিষয়টি জেনে বিকল্প পথে ঢাকায় যান। তারা দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে চলাচলরত গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা।
২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে ও বিকাল সাড়ে ৩টায় বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ওই সময় ঘাটে ছিল না গ্রিন লাইন-৩।
গ্রীন লাইন-৩-এর ব্যবস্থাপক হাসান সরদার বাদশা বলেন, ‘পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। গ্রিন লাইনের নিচে এবং ওপরে ৭৫০ সিট রয়েছে। সেখানে ২০০ যাত্রীও হতো না। এরপরও ভেবেছিলাম, পদ্মা সেতুর প্রতি মানুষের ঝোঁক রয়েছে, তবে এক মাস পার হলে যাত্রী সংকট কেটে যাবে। প্রতিদিন ঢাকা ও বরিশাল থেকে দুটি ট্রিপে যে খরচ হতো তাও উঠতো না। খরচ ওঠাতে আসা-যাওয়ায় কমপক্ষে ৬০০ যাত্রীর প্রয়োজন। এর বেশি হলে সে ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ ব্যবসার মুখ দেখতে পারতো। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততই যাত্রী সংকট দেখা দিচ্ছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজ থেকে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
তবে গ্রীন লাইন-৩ স্লিপার কোচটি কোন লাইনে দেওয়া হবে এ প্রশ্নের জবাবে বাদশা বলেন, ‘আপাতত সার্ভিস বন্ধ থাকবে। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক চালু হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনও রুটে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। গ্রীন লাইনে বিজনেস ক্লাসে এক হাজার ও ইকোনমি ক্লাসে ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা।’
আজ বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে বরিশাল স্টিমার ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বিআইডব্লিউটিসির স্টাফ মো. মিজানুর রহমান পন্টুনের গেটে তালা দিচ্ছেন। ওই ঘাটেই ভিড়তো গ্রীন লাইন-৩ স্লিপার কোচটি।
মিজান বলেন, ‘গ্রীন লাইনের যাত্রীরা এসে ভিড় করায় গেটে তালা দিচ্ছেন। বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ১৫ জনের অধিক যাত্রী এসে চলে যান। তারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সাড়ে ৩টায় গ্রীন লাইন না আসায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। আমারও জানা নেই কী কারণে গ্রীন লাইন আসেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে যাত্রীরা জানতে পারেন গ্রীন লাইন আসবে না। এরপর তারা ঘাট থেকে চলে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও যাত্রীরা আগামীকাল বুধবার আসবে কিনা জিজ্ঞাসা করছেন। আমি তাদের যারা টিকিট দেন তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেছি।’ মিজান উল্টো প্রশ্ন রাখেন—‘আপনি তো সাংবাদিক, জানেন কী কারণে গ্রীনলাইন আজ আসেনি’। তখন বন্ধের বিষয়টি তাকে জানানো হয়।
ঢাকা যাওয়ার জন্য ঘাটে এসে ফিরে যাওয়ার প্রাক্কালে কথা হয় যাত্রী মো. আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাত্রী সংকট হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, যেখানে গ্রীন লাইনে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা, সেখানে বাসে লাগছে চার ঘণ্টা। গ্রীন লাইন ও বাস ভাড়া একই। আর যাওয়া-আসার সময় বাড়তি হিসেবে পদ্মা সেতু দর্শন হয়ে যায়। এখন পদ্মা সেতুর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে কম টাকায় কম সময়ে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে যাতায়াতের পরিবহন না আনলে টিকতে পারবে না। তবে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী পরিবহন করা গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষের ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা উচিত ছিল। পূর্বে ঘোষণা না থাকায় অনেক যাত্রী এসে ফিরে গেছেন।’
২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঢাকা নৌপথে দিনের বেলায় যাত্রী পরিবহন শুরু করে গ্রীন লাইন-৩।
বার্তা কক্ষ, ২৬ জুলাই ২০২২