Home / সারাদেশ / পাখির অভয়াশ্রম যে গ্রাম
bird

পাখির অভয়াশ্রম যে গ্রাম

নাটোর গুরুদাসপুরের মশিন্দা ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের গাছগুলো বক,বাদুর, শামুকখোলসহ কয়েক হাজার পাখির আবাসস্থল। গ্রামটিতে সকাল হয় সন্ধ্যা নামে পাখিদের কিচিরমিচিরে। প্রায় বছর তিনেক ধরে গ্রামটিতে পাখিদের অবাধ বিচরণ। গাছগুলো পরিণত হয়েছে অভয়াশ্রমে।

ইতিমধ্যে গ্রামটির নাম শাহাপুর পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে ‘পাখি গ্রাম’। দিনে দিনে গ্রামে পাখির সংখ্যাও বাড়ছে। সকালে ঝাঁক ধরে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে বিকালে আবার নীড়ে ফিরে পাখিরা। গাছে গাছে শুরু হয় কলকাকলি।

‘পাখি গ্রামের’ বাসিন্দারা জানান, তিন বছর আগের শীতে সাদা বক আর শামুকখোল পাখির আনাগোনা শুরু হয় এই গ্রামে। প্রত্যন্ত এ গ্রামের বড় বড় গাছে বাসা বাঁধতে শুরু করে পাখিরা। গ্রামের বাঁশঝাড়ে আবাস তৈরি করে বাদুর। প্রথমদিকে অনেকেই পাখি শিকার করলেও পরে সচেতন মানুষদের বাঁধার মুখে পাখিদের কেউ আর বিরক্ত করেনি। শুধু শীতকাল নয়, বছর জুড়েই ওই গ্রামে পাখিরা বাস করে।

স্থানীয় মাহাবুর রহমান নামে একজন বলেন, গ্রামের মেহেগনি, আমবাগানে এবং শিমুলগাছে কয়েক হাজার পাখি আবাস গড়ে তুলেছে। সড়কের পাশের বড় বড় গাছেও বাসা বেঁধেছে পাখিরা। পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙে এ গ্রামের মানুষের।

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ‘পাখি গ্রামে’ গিয়ে দেখা যায়, গাছের ডালে নানা ভঙ্গিতে দোল খাচ্ছে সাদা বক আর শামুকখোল। দূরের মানুষেরা ঘুরতে এসে পাখিদের ছবি তুলছেন। গ্রামটি চলনবিল ঘেঁষা হওয়ায় বর্ষা মৌসুম জুড়ে এখানে অসংখ্য ছোট মাছের দেখা মিলছে। সেসব মাছ খেয়েই জীবন ধারণ করে পাখিরা।

জুলাই থেকে সেপ্টেবর মাসের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী শামুকখোল পাখিরা শুকনো চিকন ডাল, কঞ্চি, খড় এবং গাছের লতাপাতায় বাসা বাঁধে। এক একটি শামুকখোল চার থেকে ছয়টি ডিম দেয়। ২৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে ছানা ফুটে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সেই ছানাগুলো উড়তে শুরু করে। সাদা বর্ণের এই পাখির পিঠ ও ডানার অংশ কালো। পাখিটি দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৮১ সেন্টিমিটার হয়।

গুরুদাসপুরের বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষ পরম মমতায় পাখিগুলো আঁকড়ে রেখেছেন। বহিরাগতরাও এ গ্রামে পাখি শিকার করতে পারেন না। পাখির নিরাপদ আবাসের কথা চিন্তা করে গ্রামের মানুষ গাছ রোপণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

গ্রামের অন্তত ১০ জন পাখিপ্রেমী যুবক জানান, গ্রামবাসীরা মিলে পাখিগুলো সংরক্ষণে একজোটে কাজ করছে। গ্রামে পাখির নিরাপদ আবাসসহ আশপাশের বিল,নদী ও ফসলি জমিতে শামুক,পোকামাকড়,ছোট মাছ ও ব্যাঙ খেতে গিয়ে যাতে শিকারির ফাঁদে না পড়ে সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, পৃথিবীতে দু’ প্রজাতির শামুকখোল পাখি রয়েছে। এরমধ্যে সাদা বর্ণের পাখিটি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও থাইল্যান্ডে স্থায়ীভাসে বাস করে। উপযুক্ত আবহাওয়া, খাদ্যের জোগান ও অভয়াশ্রম হওয়ায় শাহাপুড় গ্রামে বিশাল আবাসস্থল গড়ে তুলেছে শামুকখোল।

চাঁদপুর টাইমস
৮ ডিসেম্বর ২০২৪
এজি