আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল
রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও! বাঁকা গাঁয়ে পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও-পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের‘‘রাখাল ছেলে’’ কবিতায় গ্রাম বাংলার কৃষক রাখালসহ সহজ সরল মানুষদের জীবনচিত্র মূর্তমান হয়ে কষ্টের তীব্রতা বুকে নিয়ে কৃষকরা ফসল ফলায়, খাদ্যের যোগান দেয় কোটি কোটি মানুষের। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার এক সময়কার ঐতিহ্য গরু-বলদ দিয়ে হালচাষ আজ হারিয়ে গেছে।
বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনেক কিছুতেই এনে দিয়েছে আমুল পরিবর্তণ। তেমনই বৈজ্ঞানিক পদ্ধদ্ধিতে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে কৃষি জমিতে চাষাবাদ শুরু হওয়ায়, চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বলতে গেলে বিলুপ্তই হয়ে গেছে, সেই বাপ-দাদার আমলের বলদ ও গরু দিয়ে হালচাষ।
মতলবের কৃষকরা এখন আর লাঙ্গল দিয়ে সেই মান্ধাতার আমলের মত হাল-চাষই করেনা। সেই স্থান দখল করেছে পাওয়ার টিলার আধুনিক যন্ত্রপাতি। স্বল্প সময়ে বেশী জমি চাষ করে কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতেই এখন স্বাচ্ছন্দবোধ করে কৃষক। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সেই বাপ-দাদার আমলের গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য গরু-বলদের হাল। তবে সমস্যা যে হচ্ছেনা, তা কিন্ত নয়। পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষের পর, জমি সমান করতে না পেরে আবার দিন মজুরদের হালের বলদ সেজে ‘মই’ দিয়ে জমি সমান করতে হচ্ছে। এতে করে দিনমজুরকে বর্ণনাতিত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগে হাল-চাষের ক্ষেত্রে পাওয়ার টিলারের ব্যবহার অনেকের জন্যই ক্ষতির কারণও বটে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে অনেক কৃষকই পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষ করে নিচ্ছে। তবে এখনো কিছু কিছু বলদ ও গরুর হাল চোখে পড়ে।
আবার যারা পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষ করেছেন, তারা দিনমজুর দিয়ে হালের বলদ/মহিষের ন্যায় ‘মই’ দিয়ে জমি সমান করছেন। উপজেলার আমুয়াকান্দি গ্রামের কৃষক ওয়ালী উল্যাহ, ছেংগারচর পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেন মুফতি, ঠাকুরচর গ্রামের কৃষক আঃ বারেক প্রধান, তালতলী গ্রামের নান্নু মিয়া সর্দার, ঘনিয়ারপাড় গ্রামের মজিবুর রহমান প্রধান জানান, পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষে যেমন সুবিধা রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। দ্রুত জমি চাষ যেমন করে নেয়া যায়, তেমনি জমি সমান করা যায় না।
এ জন্য হয় বলদের অথবা মহিষের হালের প্রয়োজন হয়। সে জন্যই বলিহালের বলদ-মই, সে গুলি এখন গেল কৈ? নচেৎ দিনমজুরকে বলদ সাজিয়ে মই দিয়ে জমি সমান করতে হচ্ছে কেন?
এ ব্যাপারে কৃষি অফিসার মোঃ সালাউদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের মাধ্যমে জমি হাল-চাষ এমনকি চারা পর্যন্ত রোপন করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান,পাওয়ার টিলারের মাধ্যমেও জমিতে মই দেয়া যায়। তবে কষ্ট হয় বেশী। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দেখবেন ২-৪ বছরের মধ্যেই মই দেয়ার জন্যও ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র বের হয়ে যাবে।
প্রতিবেদক:খান মোহাম্মদ কামাল