শাহরাস্তি

‘গ্রাম আদালতে কম সময়ে কম খরচে বিচার পাওয়া সম্ভব’

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে গ্রাম আদালত বিষয়ক কর্মশালা মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সম্পন্ন হয়। পর্যায়ক্রমে জেলার ৫ উপজেলায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন মিয়াজি।

বক্তব্যে তিনি বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নারী বা পুরুষ প্রত্যেকেরই বিচার প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। বাড়ির কাছেই গ্রাম আদালত, গ্রাম আদালতে কম সময়ে কম খরচে বিচার পাওয়া সম্ভব, নিজের পরিচিত পরিবেশে বিচার হয় বলে নারীর জন্য নিজের সব কথা সহজে বলা যায়। নিজের পছন্দমত প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া যায় বলে নারী বিচার প্রার্থীগণ সহজেই গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার সুযোগ পান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাবিব উল্লাহ ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী শাম্মীনাজ আলম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী নারী বিরোধের পক্ষ হলে বা স্বার্থ জড়িত থাকলে অথবা শিশুর স্বার্থ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে কমপক্ষে একজন নারী প্রতিনিধি মনোনয়ন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেক পক্ষ ২ জন করে যখন প্রতিনিধি নিয়োগ করে সেই প্রতিনিধি নারী বা পুরুষ যে কেউই হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচনার বিষয় হলো তিনি বিরোধের বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন, যিনি বিচার প্রার্থীর পক্ষে আদালতে কথা বলবেন এবং যার সুবিবেচনাবোধ রয়েছে, এবং যার প্রতি আস্থা রাখা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে বিচারের নামে কেউ যেন হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে তিনি গ্রাম আদালতের বিচারিক প্যানেলের সকল সদস্যদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা কামনা করেন।

উপজেলা সমন্বয়কারী গেীতম কুমার সরকারের উপস্থাপনায় কর্মশালায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা স্থানীয় সরকারের গ্রাম আদালত বিষয়ক ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় নারী ও পুরুষ প্রতিনিধির অধিকার ও গুরুত্ব সমান। প্রত্যেকে প্যানেল সদস্যের ভোটের গুরুত্ব সমান। তাছাড়া নারীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একজন নারী প্রতিনিধি নারীর সমস্যাটি ভালো অনুধাবন করতে পারেন এবং তার পক্ষে অধিকতর জোড়ালোভাবে সমস্যা বিশ্লেষণ, যুক্তি তুলে ধরতে পারেন। নারী প্রতিনিধির উপস্থিতি থাকলে নারী বিচার প্রার্থীর জন্য তার সমস্যা নিঃসংকোচে বলা সহজ হয়। গ্রাম আদালতের প্যানেল সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি হয়। গ্রাম আদালতের প্যানেলে নারী জনপ্রতিনিধির অংশগ্রহণ জনগণের প্রতি নির্বাচিত দায়িত্ব পালনের অংশ।

বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় ইউনিয়ন পরিষদে আদালতের মতো বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদালতগুলোতে এজলাস স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতি গ্রাম আদালতে একজন করে আদালত সহকারী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও অত্র প্রকল্প থেকে গ্রাম আদালতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফরম ও রেজিস্টার প্রদান করা হয়েছে যাতে আদালতের নথি শুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা যায়। গ্রাম আদালতে মামলা খরচ খুবই কম। দেওয়ানী মামলা জন্য ২০ টাকা এবং ফৌজদারী মামলার জন্য ১০ টাকা মাত্র।

এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে চাঁদপুরের ৫টি উপজেলায় ৪৪টি ব্যাচের মাধ্যমে মোট ৯২৪ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চলছে। ইতিপূর্বে জেলাপর্যায়ে মোট ১৭৬ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

এদের মধ্যে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব, ইউপি সদস্য ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত গ্রাম আদালত সহকারীবৃন্দ। এ কর্মশালায় উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত সংরক্ষিত আসনের সকল নারী সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, এলাকার কতিপয় ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিরোধসমূহের সমাধান এবং গ্রামের দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ -এর ক্ষমতাবলে সরকার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত স্থাপন করেছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
: আপআপডেট, বাংলাদেশ ৩:০৩ পিএম, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ সোমবার
ডিএইচ

Share