চাঁদপুর শহরে ২৬৪টি অবৈধ ও বকেয়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

চাঁদপুরে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বিশেষ অভিযানে ২৬৪টি অবৈধ ও বকেয়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটে আওতায় চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি এবং মতলব দক্ষিণে ২৩ হাজার ৮৫০টি, আবাসিক, ২০৬টি বাণিজ্যিক, ৫টি সিএনজি, ৩টি ক্যাপটিক, ১টি পাওয়ার এবং ২টি ইন্ড্রাস্ট্রি বৈধ গ্রাহক হিসেবে রয়েছে।

গ্যাস সঙ্কটের কারণে প্রায় ১০ বছর ধরেস সারা দেশে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। নতুন সংযোগ বন্ধ থাকায় যখন গ্যাস সংকটে ভুগছিলো চাঁদপুরের সাধারণ মানুষ, তখন তাদের চোখের সামনেই অবৈধ পন্থায় গ্যাস সংযোগ পেয়েছিলো অসংখ্য বহুতল ভবনের মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, তারা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর কতিপয় ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তার যোগাজোগে অর্থের বিনিময়ে এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছিলো।

আরও পড়ুন… চাঁদপুরে বাড়িওয়ালাদের অনিয়মে গ্যাস দুর্ভোগে ভাড়াটিয়ারা

এছাড়াও কেউ কেউ ক্ষমতার দাপটে কিংরা রাতের আঁধারে চুরি করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। যার কারণে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। এইসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান চালালেও তেমন কোন সুফল পাচ্ছিলো না কর্তৃপক্ষ।

অবশেষে চাঁদপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছড়াছড়ি’ এমন অভিযোগে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ একযোগে গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রের ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করে।

এরপর কর্তৃপক্ষ গত ৩০ মে চাঁদপুরসহ কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলার সমন্বয়ে ২১টি টিমকে একাধিক ভাগে ভাগ করে অবৈধ ও বকেয়া খেলাপি গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বিশেষ অভিযানে নামায়।

এ অভিযানে এখন পর্যন্ত চাঁদপুর শহরে ২৬৪টি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ৬টি, বাকি ২৫৮টি আবাসিক গ্যাস সংযোগ। আবাসিক গ্যাস সংযোগগুলোর মধ্যে ৭০টি বকেয়া এবং বাকিগুলো সব অবৈধ সংযোগ ছিল। মাত্র ১০ দিনের অভিযানে গ্রাহকদের থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই বিশেষ অভিযান চলবে আগামি ৩০ জুন পর্যন্ত।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড চাঁদপুরের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদুজ্জামান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, গত ৩০ মে থেকে এ অভিযান অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা প্রথমে শহর এলাকায় অভিযান করছি। এরপর পর্যায়ক্রমে উপজেলাগুলোতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান চালানো হবে। অভিযানের সময় একমাস হলেও অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যত সময় লাগবে অভিযান করা হবে।

এদিকে সেই কতিপয় ঠিকাদারের যোগসাজশে চলমান অভিযানে গ্যাস বিচ্ছিন্নকারী টিম চলে যাওয়ার পর অবৈধ গ্রাহকরা পুনরায় সংযোগ চালু করাার অভিযোগ উঠেছে।

এমন অভিযোগের কথা স্বীকার করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড চাঁদপুরের ব্যবস্থাপক চাঁদপুর টাইমসকে জানান, অভিযানে বিচ্ছিন্ন করা সংযোগ আমরা চলে আসার পর পুনরায় চালু করার অভিযোগ পেয়েছি। এমন একটি অভিযোগে একটি সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করেছি। কেউ যদি অবৈধভাবে সংযোগ চালু করার চেষ্টা করে তবে ওই গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

এদিকে চাঁদপুর শহরের অনেক ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, আমরা যারা ভাড়াটিয়া তারা বাড়িওয়ালার ঘর ভাড়ার সাথে নিয়মিত গ্যাস বিল দিয়ে এসেছি। অথচ বাড়িওয়ালার এই গ্যাস সংযোগ যে অবৈধ তা আমাদের জানা ছিলো না। তারা অবৈধ গ্যাসের চুলা দিয়ো মাসে মাসে টাকা কামিয়েছে। এখন বাড়ি মালিকের অপরাধে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। তবে এমন অভিযানের ফলে মুখধারী ভদ্রলোক বাড়িওয়ালাদের চিনতে পেরেছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে টাকা কামাতে এমন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে আসছিলে।

তবে বাড়িওয়ালাদের কেউ কেউ বলছে ভিন্ন কথা, তাদের দাবি কর্তৃপক্ষে গাফলতির কারণেই কতিপয় ঠিকাদার এবং অসাধু কর্মকর্তারা এই অনিয়ম করেছে। অথচ তাদের অনিয়মের শাস্তি ভোগ করছি আমরা।

জেলার সচেতন মহলের দাবি, লাখ খানেক টাকা খরচ করে নানা আয়োজনে এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান যেনো মাঝ পথে থেমে না যায়।

প্রতিবেদকঃআশিক বিন রহিম, ১১ জুন ২০২১

Share