সরকার বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ দেবে না। গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনাও সরকারের নেই। তবে গ্যাস চুরি ও অপচয় ঠেকাতে ঢাকা শহরের তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন ঢেলে সাজানো হবে।
ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কয়েক দিন ধরে বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ চালু হবে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তিতাস গ্যাসসহ বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ সংস্থাগুলোতে নতুন সংযোগ পেতে গ্রাহকেরা ভিড় জমিয়েছেন। এ সময় রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নতুন গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বড় একটি দালাল সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই দালাল চক্রটি ভবনভেদে নতুন গ্যাস–সংযোগ দিতে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করছে।
বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী, জানতে চাইলে রোববার দুপুরে সচিবালয় নিজের কার্যালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে না। এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নতুন করে বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। ভবিষ্যতে বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে—সেটিও অনিশ্চিত।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে, এমন একটি কথা একটি সিন্ডিকেট প্রচার করছে বলে আমাদের নজরে এসেছে। এতে করে একটি দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থায় রয়েছি। বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে না।’ তিনি প্রতারকদের ফাঁদে পাড়া না দিতে গ্রাহকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের গ্যাসের পাইপলাইন অনেক পুরোনো। এতে অনেক পাইপলাইন থেকে গ্যাসের অপচয় হয়, কোথাও পাইপলাইন কাটা পড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি মেরামত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, গ্যাসের গোটা বিতরণব্যবস্থা সেকেলে হওয়ায় কোনো ত্রিমাত্রিক ম্যাপও নেই। গ্যাসের অপচয় ও চুরি ঠেকাতে পাইপলাইনের আধুনিকায়ন করা হবে প্রথমে রাজধানীতে।
এ জন্য জাপানের জাইকার একটি প্রস্তাবও রয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্যাসের অপচয় ও চুরি ঠেকানো সম্ভব হবে। সবখানে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে বলেও নসরুল হামিদ জানান।
গ্যাস-সংকটের কারণে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে নতুন আবাসিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে নতুন গ্যাস–সংযোগের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে যাচাই-বাছাই করে নতুন সংযোগ দেওয়া হতো।
তবে ২০১৩ সালের শেষ দিকে সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জ্বালানি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ না দিতে বলা হয়। গত বছর ২১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তিতাসের আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সিএনজি–সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দেয় জ্বালানি বিভাগ।
তবে গ্যাস–সংযোগ বন্ধ থাকার পরও তিতাস গ্যাস এলাকায় প্রায় পৌনে তিন লাখ গ্রাহককে আবাসিক সংযোগ দিয়েছে। এসব গ্রাহক ব্যাংকে মাসের বিলও জমা দিচ্ছেন। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯, যা ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ছিল ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৩। অর্থাৎ চার বছরে সংযোগ বেড়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬। এর মধ্যে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সাত লাখ সংযোগ বৈধ করা হয়। এর বাইরেও ২ লাখ ৬৬ হাজার সংযোগ রয়েছে বলে তিতাস সূত্র জানিয়েছে।
অবৈধ গ্রাহককে কোনোভাবেই বৈধ করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো.আল-মামুন।
তিনি বলেন, ‘গ্যাস–সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো পক্ষ যেন সুবিধা নিতে না পারে, সে জন্য আমরা কাজ করছি।
বার্তা কক্ষ ১৪ জানুয়ারি ২০২০