‘গোপনে দেশ ছাড়লেন’ সাবেক শিক্ষামন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠার পর গোপনে দেশ ছাড়লেন বিএনপি নেতা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক। গত সপ্তাহে সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। ভারত হয়ে ওসমান ফারুক যুক্তরাষ্ট্র গেছেন বলে জানিয়েছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

অবশ্য দেশত্যাগের কয়েক দিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি ১৯৭১ সালে দেশে ছিলেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

গত ৪ মে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে মামলা করা হবে। ওইদিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক এ তথ্য জানান।

সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, ওসমান ফারুক স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এর পক্ষে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, গত সপ্তাহে ড. ওসমান ফারুক দেশত্যাগ করেন। তার ভারতের ভিসা ছিল। বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়তে গেলে বাধার সম্মুখীন বা গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সীমান্তপথ বেছে নিয়েছেন তিনি। ভারত থেকে পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলে গেছেন বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। এমনিতেও বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি সেখানেই অবস্থান করতেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ড. ওসমান ফারুক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। স্বাধীনতাবিরোধী অভিযোগে গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শেই দেশ ছাড়েন তিনি। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করবেন ওসমান ফারুক। সেখানে থেকে একদিকে গ্রেফতার এড়াবেন, অন্যদিকে দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে করে দলটির হাইকমান্ড।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থা দাবি করেছে, কাগজপত্রে ওসমান ফারুক যুদ্ধাপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে তারা। সংস্থাটির দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ওসমান ফারুকসহ ১১ জন শিক্ষক পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন এবং স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। সেখানে একটি টর্চার সেলও ছিল। ওই তালিকা অনুযায়ী খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা ছিলেন।

তদন্ত সংস্থার অভিযোগ, উনি (ওসমান ফারুক) সে সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার ইকোনমি অনুষদের রিডার ছিলেন। বিদেশে অবস্থানরত তার ভাই বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলেও জানায় তদন্ত সংস্থা। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য ওসমান গণির ছেলে ড. ওসমান ফারুক।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা হাস্যকর ও অবাস্তব। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হয়েছে। (সমকাল)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:৫০ পিএম, ২৭ মে ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share