‘জাতীয় কবি’র গেজেট চেয়ে আইনি নোটিশ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব,বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ৩১ মে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মো.আসাদ উদ্দিন এ নোটিশ পাঠান। নোটিশ প্রেরণকারী অন্য আইনজীবীরা হলেন- মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন,মো.জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মো.আমির,মো.রেজাউল ইসলাম,কে এম মামুনুর রশিদ,মো.আশরাফুল ইসলাম,শাহীনুর রহমান,মো.রেজাউল করিম ও মো.আলাউদ্দিন।

নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবী মো.আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান,কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই।

১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু,শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলকে ‌‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি হয়ে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকাবিভাবে তাঁকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে কোনও প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কোনও মৌখিক বিষয় নয়।

আইনজীবী মো.আসাদ উদ্দিন বলেন,‘স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাঁকে একটি বাড়ি দেয়া হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করে।

এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে‘একুশে পদক’ দেয়া হয়। সবকিছুরই ছবি,তথ্যসহ লিখিত দলিল আছে। কিন্তু নির্মম সত্য এটিই যে,‘জাতীয় কবি’ হিসাবে সরকারি ঘোষণার কোনও লিখিত দলিল বা প্রমাণ নেই।’

বাংলাদেশের দু’টি আইনে জাতীয় কবি হিসাবে নজরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি আয়োজনে তাঁকে জাতীয় কবি হিসাবে উল্লেখও করা হয়। কিন্তু সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি।

এমন স্বীকৃতি কালের পরিবর্তনে মুছে যেতে পারে। আগামীর প্রজন্ম একদিন হয়তো না-ও জানতে পারে যে,আমাদের জাতীয় কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি আমাদের ইতিহাসের অংশ।

ইতিহাস ও জাতীয় স্বীকৃতি কখনও অলিখিত থাকতে পারে না। অলিখিত ইতিহাস ও তথ্য সময়ের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যায়। এ জন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণে রাষ্ট্রকে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিতে হয়। এছাড়া নজরুলকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণার দাবিতে কবি পরিবারের পক্ষ হতে বারবার দাবি তোলা হয়েছে।

নজরুল গবেষক এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও অনেক দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশ প্রাপ্তির ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় নোটিশদাতারা উচ্চ আদালতের সম্মুখীন হবেন মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩১ মে ২০২২
এজি

Share