লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মরদেহ সেখানকার মিজদাহ শহরেই কবর দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক বাংলাদেশি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, মরদেহগুলো পঁচে গন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এদিকেযুদ্ধাবস্থা চলমান থাকায় এবং হামলাকারী লিবিয়ান ওই গোষ্ঠী চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে যেতে পারেননি।
হামলাকারীরা অন্য বাংলাদেশিদেরও খুঁজছে বলে জানান স্থানীয় বাংলাদেশিরা। তবে নিহত বাংলাদেশিদের স্থানীয়ভাবে দাফন করার বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অবশ্য শুক্রবার দুপুরে দেয়া বিবৃতিতে মরদেহগুলো মিজদাহ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানায় মন্ত্রণালয়।
এদিকে বেনগাজীর বাংলাদেশ কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের অবস্থা ভালো নয়। পরিস্থিতি এত খারাপ যে, এখনও অক্ষত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হওয়া বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা জীবিত বাংলাদেশিদের অবস্থান জেনে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে এবং আশ্রয়দাতাসহ অনেকেই হুমকির মুখে থাকাতে উদ্ধার কাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানায়, মিজদাহ শহরে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান এবং এ অঞ্চলটি এখন দুটি শক্তিশালী পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। কিছুদিন আগে ত্রিপোলিভিত্তিক এবং ইউএন সমর্থিত জিএনএ সরকার এই অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্বভিত্তিক সরকারি বাহিনী দুদিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করে।
লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় মিলেছে। বাকি দুইজনের জানার চেষ্টা চলছে। আহতরা ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের সুজন ও কামরুল, মাদারীপুরের জাকির হোসেন, সৈয়দুল, জুয়েল ও ফিরুজ, রাজৈরের বিদ্যানন্দীর জুয়েল ও মানিক, টেকেরহাটের আসাদুল, আয়নাল মোল্লা (মৃত) ও মনির, ইশবপুরের সজীব ও শাহীন, দুধখালীর শামীম, ঢাকার আরফান (মৃত), টাঙ্গাইলের মহেশপুরের বিনোদপুরের নারায়ণপুরের লাল চান্দ, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব ও সোহাগ, রসুলপুরের আকাশ ও মো. আলী, হোসেনপুরের রহিম (মৃত) এবং যশোরের রাকিবুল।
আহত ১১ জন হলেন- মাদারীপুর সদরের তীর বাগদি গ্রামের ফিরোজ বেপারী (হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ), ফরিদপুরের ভাঙ্গার দুলকান্দি গ্রামের মো. সাজিদ (পেটে গুলিবিদ্ধ), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শম্ভপুর গ্রামের মো. জানু মিয়া (পেটে গুলিবিদ্ধ), ভৈরবের জগন্নাথপুর গ্রামের মো. সজল মিয়া (দুই হাতে মারাত্মকভাবে জখম), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা বাড়ির ওমর শেখ (হাতে মারাত্মকভাবে জখম ও আঙ্গুলে কামড়ের দাগ, দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ), টাঙ্গাইলের মহেশপুরের বিনোদপুরের নারায়ণপুরের মো. তরিকুল ইসলাম (২২), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বেলগাছির খেজুরতলার মো. বকুল হোসাইন (৩০), মাদারীপুরের রাজৈরের কদমবাড়ির মো. আলী (২২), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সখিপুরের মওটুলীর সোহাগ আহমেদ (২০), মাদারীপুরের রাজৈরের ইশবপুরের মো. সম্রাট খালাসী (২৯) এবং চুয়াডাঙ্গার বাপ্পী (মাথায় গুলিবিদ্ধ)। এরা সবাই ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের এ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। বর্তমানে এমনকি ত্রিপোলি শহরেও বিরোধীপক্ষ মাঝেমাঝে বোমাবর্ষণ করে থাকে। দুটি শক্তিশালী পক্ষ যুদ্ধরত থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক নয়। এ কারণে অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস তিউনিসিয়াতে স্থানান্তর করলেও বাংলাদেশসহ মাত্র তিনটি দেশ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
বার্তা কক্ষ,৩০ মে ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur