গাজা মানুষ ‘হত্যার ক্ষেত্র’: গুতেরেস

ফিলিস্তিনের গাজায়‘ত্রাণ ফুরিয়ে গেছে ও ভয়াবহতার দুয়ার আবার খুলেছে’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। উপত্যকাটিতে ত্রাণ ও সব ধরনের পণ্য সরবরাহের প্রবেশ আটকে দিয়েছে ও সম্প্রতি সেখানে নতুন করে বেপরোয়া হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার বলেন, ‘গাজা মানুষ হত্যার একটা ক্ষেত্র (হয়ে উঠেছে) ও সেখানকার বেসামরিক লোকজন এক অন্তহীন মৃত্যুফাঁদে আটকে পড়েছেন।’

গুতেরেসের এ মন্তব্যের আগে জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থার প্রধান ফিলিস্তিনিদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে খাবার ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় যথেষ্ট খাবার রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুতেরেস কুৎসা রটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রথম দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ২ মার্চ শেষ হয়। এর পর থেকে দেশটি আবারও গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং সেখানে নতুন করে নির্বিচার হামলা ও বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।

১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলের নতুন করে শুরু করা বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, তারা কোনো বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করে না।

আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীন গাজার জনগণের কাছে খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা দখলদার শক্তির (ইসরায়েল) রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সে পথ বন্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও ইতিহাসের চোখে এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় কোনো খাবারের সংকট নেই। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরিন মারমোরস্টেইন বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই। ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ত্রাণবাহী ২৫ হাজারের বেশি ট্রাক ঢুকেছে।’

গুতেরেসের মন্তব্যের আগে সোমবার এক যৌথ বিবৃতি দেয় জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থা। বিবৃতিতে তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে খাবার ও ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার বাসিন্দারা আবার ফাঁদে আটকে পড়েছেন এবং বোমা হামলা ও ক্ষুধার শিকার হচ্ছেন। গাজার সব বাসিন্দাকে খাওয়ানোর মতো এখন যথেষ্ট খাদ্য নেই এবং অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ফুরিয়ে আসছে।’

বিবৃতিতে যেসব সংস্থার প্রধানেরা সই করেছেন,সেসব হলো ওসিএইচএ, ইউনিসেফ,ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও, ইউএনআরডব্লিউএ, ইউএনওপিএস।

ইতোমধ্যে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এ উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ হাজার ৮১০–এর বেশি। সূত্র:বিবিসি

১১ এপ্রিল ২০২৫
এজি

Share