গাজায় একটু খাবারের আশায় মরিয়া হয়ে ঘুরছে মানুষ

প্রায় ১৪ মাসের যুদ্ধের ধাক্কায় তীব্র খাদ্য সংকটে থাকা ফিলিস্তিনিরা গাজার ধ্বংসস্তূপে দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক মুঠো ময়দা বা এক টুকরো রুটির সন্ধানে।

প্রতিদিন সকালে গাজার অল্প কয়েকটি খোলা বেকারির সামনে ভিড় জমে, যেখানে মানুষ একটু খাবারের আশায় মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করেন। খবর আল জাজিরার।

হাতেম কুল্লাব নামে এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, আমি প্রায় আট কিলোমিটার (পাঁচ মাইল) হেঁটে রুটি আনতে গিয়েছিলাম।

গত বছর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দাতব্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংগঠনগুলো এ অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ লোকের ক্ষুধার সংকটের ভয়াবহতা নিয়ে বারবারই সতর্ক করে আসছে।

জাতিসংঘ-সমর্থিত গত মাসের এক মূল্যায়নে সতর্ক করা হয়, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন, কারণ ইসরায়েলি হামলার ফলে খাদ্য সহায়তার প্রবাহ প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি ও ওষুধেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

গাজায় এখন ভোরের আলো ফুটতেই লোকেরা উঠে পড়েন, যেন সামান্য ময়দা বা রুটি সংগ্রহ করা যায়। কারণ, এগুলোর প্রাপ্যতাএখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

৫৬ বছর বয়সী নাসের আল-শাওয়া বলেন, বাজারে কোনো ময়দা নেই, খাবার নেই, বাজারে সবজি নেই।

বেশিরভাগ বাসিন্দার মতো, তিনিও বোমাবর্ষণের কারণে বাধ্য হয়ে নিজের বাড়ি ছাড়েন। এখন তিনি তার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে মধ্য গাজায় বসবাস করছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যেসব খাবার পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর দাম আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজার অভ্যন্তরে অর্ধেকের বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।

ময়দার কারখানা, গুদামসহ প্রাতিষ্ঠানিক বেকারিগুলো কার্যক্রম চালাতে পারছে না। কারণ ইসরায়েলি হামলার কারণে সেসবের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করছে। তবে ত্রাণ বিতরণ করা সংগঠনগুলো বারবার অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েল তাদের ওপর অনেক সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রেখেছে। কিন্তু ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) রোববার ঘোষণা দেয়, কেরেম আবু সালেম (কেরেম শালোম) সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করেছে। সংস্থাটি জানায় যে, সাহায্য সরবরাহ এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর পেছনে বিভিন্ন গ্যাংয়ের লুটপাটও আংশিক দায়ী।

স্বামী ও সাত সন্তান নিয়ে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি অঞ্চলে তাঁবুতে বাস করা লায়লা হামিদের জন্য ত্রাণ বন্ধের এ সিদ্ধান্ত মাথায় গুলির আঘাতের মতো। তিনি বলেন, তার পরিবার ইউএনআরডব্লিউএ থেকে নিয়মিত অল্প পরিমাণে ময়দা পেত।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই আমি ভাবি, আমরা হয়তো আর বাঁচব না। হয় আমরা ইসরায়েলি বোমা নয়তো ক্ষুধায় মারা পড়ব। তৃতীয় কোনো উপায় এখানে নেই।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

Share