চাঁদপুর

গাছকে খুঁটি বানিয়ে প্রতারকচক্রের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ

চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কোন পদের কর্মকর্তা কর্মচারী না হয়েও চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর বালিয়া গ্রামে পিডিবির নাম ভাঙ্গিয়ে খুঁটি বিহিন অবৈধ ভাবে শত শত গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে একটি চক্র।

এ সুযোগে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানা গেছে। এমনকি ওই সিন্ডিকেটরা তাদের ব্যবহৃত নিজস্ব মোটর সাইকেলে জরুরী বিদ্যুৎ সরবরাহ লিখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই গ্রামের সহজ সরল গ্রাহকরাও গাড়ীর ওই লেখা দেখে সরল মনে সহজেই বিশ্বাস করছেন সিন্ডিকেট প্রতারকদের।

চাঁদপুর টাইমসের ফেসবুক পেজে একাধিক পাঠকের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই গ্রামে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায় প্রতারক চক্রটি চাঁদপুর বিদ্যুৎ অফিসের কোন সিমেন্টের অথবা কাঠের কোন খুঁটি ব্যবহার না করে খুটি ছাড়াই ঝুকিপূর্ণভাবে বহু গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। তারা মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করেই এসব অবৈধ সংযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খুঁটির পরিবর্তে তারা প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের মাঝে এক থেকে দেড়শু গজ দুরত্বে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সংযোগের তার নিয়েছেন। এমনকি রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলোকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাই যা হবার তাই হচ্ছে। খুঁটি না থাকায় বিদ্যুৎেতের ওইসব তারগুলো ঝুঁকিপূর্ন ভাবেই পড়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎতের তার মাটিতে পড়ে থাকায় ওইসব তারে অনেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এমনকি গত বছরের রমজান মাসে স্থানীয় এলাকার এসব অবৈধ সংযোগের তার পুকুরের পানিতে পড়ে থাকায় জমিলা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা নারী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। তার ৬/৭ মাস পরে একই ভাবে মারা যান ওই এলাকার ফজলু খানের ভাগিনা মিঠু নামের এক যুবক।

এমন কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটার পরেও তারা খুঁটি দিবে বলেও বিভিন্ন জনের কাছে টাকা নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার সত্যে অনেকে জানান। মজবুত কোন খুঁটি না থাকায় এখন ঝড়বৃষ্টির দিনে ওই গ্রামের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের তার গুলো ঝুঁকিপূর্ন ভাবে রয়েছে। তাই এসব সংযোগের কোন ব্যবস্থা না নিলে যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে অনেক দুর্ঘটনা।

প্রতারক চক্রের সদস্য শহীদ শেখ গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্বনিন্ম ৭ হাজার হতে ৮/১০ হাজার টাকা করে নিয়ে মিটারের মাধ্যমে সংযোগ দেন। তারপর শুরু করেন মমিন গাজী। এভাবেই শুরু হয় প্রতারক চক্রের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবসা।
আর হাফেজ খান তার ঘরে থাকা মিটারের সংযোগ থেকে বিভিন্ন পরিবারকে মাসিক প্রতি লাইট দেড়শ ও ফ্যান প্রতি ২শ টাকা করে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

ওই গ্রামের নান্নু গাজী নামে এক ব্যাক্তি জানান ‘মমিন গাজী মিটার দিবে বলে আমার কাছে ৮ হাজার টাকা নিয়ে ৭/৮ মাস ধরে ভাড়াচ্ছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের বেশ ক’জন ব্যাক্তি জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯ নং বালিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডস্থ উত্তর বালিয়া গ্রামের শহীদ শেখ, হান্নান গাজীর ছেলে মমিন গাজী ও আমির খানের ছেলে হাফেজ খান মিলে ওই গ্রামের বিভিন্ন মানুষদেরস কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়ে মিটারের মাধ্যমে খুঁটি বিহিন ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। খবর নিয়ে জানা যায় ওই গ্রামে যারা তাদের কাছে থেকে এভাবে বিদুৎ সংযোগ নিয়েছেন তাদের এমন অনেক গ্রাহক রয়েছেন ৮/৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও যাদের কোন প্রকার বিদ্যুৎ বিলের কাগজ আসেনি। আর যারা এ সংযোগ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তাদের সাথে চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এসব অবৈধ সংযোগর বিষয়ে শহীদ শেখের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এসব লাইন দেইনি। মমিন গাজী তার এলাকায় এসব অনেক সংযোগ দিয়েছেন।’

হাফেজ খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমিতো কাউকে মাসিক লাইন দেইনি। শহীদ শেখ শুধু আমার কাছ থেকে একজনকে লাইন দিয়েছে।’

এ ব্যাপারে মমিন গাজী বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ অফিসের কোন কর্মচারী নই। বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ভাইয়ের মাধ্যমে আমি এসব মিটারের সংযোগ দেই।’

তার কথামতো শাহ আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘যে আমার কথা বলেছে তাদের আমি চিনিনা। ওই এলাকায় যখন ৪ টি খুঁটির প্রয়োজন হয় তখন আমার ভাই ওই কাজগুলো করেছে। ওই এলাকায় যেসব লাইন গুলো দেয়া হয়েছে তা সংরক্ষণের জন্য তার সাথে শুধু এতটুকু কথা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আ. ফ. ম. মোস্তাফিজুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘পিডিবি কখনো কি ঝুঁকিপূর্ন ভাবে এসব সংযোগ দেয়ার অনুমতি দিবেনা। কোন এলাকায় এসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে তাতো আমি চিনিনা। তাই ওই এলাকার দায়িত্বে যে রয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করে আমরা খবর নিয়ে অবশ্বই ব্যবস্থা নিবো।’

প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০: ৫০ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ

Share