আবারও অধ্যক্ষের আসনে বসলেন চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গল্লাক আদর্শ ডিগ্রী কলেজের পলাতক অধ্যক্ষ হরিপদ দাস। গত ৫ আগস্টের দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকায় কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে তিনি দীর্ঘ প্রায় তিন মাস কলেজে না এসে পলাতক ছিলেন এবং দীর্ঘ তিন মাস পর স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাকে কলেজে ফিরিয়ে এনে নিজ শেয়ারে বসিয়েছেন। জানা যায় অধ্যক্ষ হরিপদ দাস সাবেক এমপি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সময়ে অবৈধভাবে এ কলেজে নিয়োগ পান। গত বুধবার সকালে তাকে স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা তাকে গল্লাক ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের রুমে চেয়ারে এনে বসান। এই নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন রকম মতবিরোধ চলছে। অনেকের ধারণা বিএনপি’র নেতারা অবৈধ এই অধ্যক্ষকে কলেজে ফেরত আনার কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অধ্যক্ষ হরিপদ দাস সরাসরি বিরোধিতা করা, আন্দোলন করলে অধ্যক্ষ নিজে বাদী হয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করা, ডিসিকে দিয়ে ছাত্রদের হয়রানি করার হুমকি, কলেজে আওয়ামী রাজনীতি ঢুকিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা, কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করা, কলেজ পাণ্ডের টাকা দিয়ে আওয়ামী রাজনীতির প্রোগ্রাম করা, কলেজের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য, অধ্যক্ষ হিন্দু তাই ভিন্ন মতের লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করা, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের সাথে অশুভ আচরণ করা, বিভিন্ন মান্যগণ্য অভিভাবকদের সাথে মনের মিল না হলে খারাপ আচরণ করা, মুসলিম বিদ্বেষী আচরণ করা, কলেজ মাঠে যুব শ্রেণী আয়োজিত বাৎসরিক মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলন যেন না হয় তা বন্ধ করতে সকাল ৯ টা হতে বিকেল পর্যন্ত কলেজে পুলিশ এনে রাখা, এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা, প্রমাণসহ নারি কেলেঙ্কারি, ছাত্রীদের সাথে শারীরিক ইভটিজিং করা তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিএনপি, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বিতর্কিত মতামত পোষণ করা সহ হরেক রকম অভিযোগে অভিযুক্ত ফরিদগঞ্জের গল্লাক আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের পদত্যাগ চাইছে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র কলেজের অনেক সহকারী অধ্যাপক ও কর্মচারীরা।
জানা যায়, অধ্যক্ষ হরিপদ দাস গত ৫ আগস্ট থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ। তাকে মোবাইল করে ও পাওয়া যায় না, এবং গত ২৩ অক্টোবর বুধবার পর্যন্ত তিনি কলেজে আসেন না এবং কলেজে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব পালন করার অনুমতি দেন না। এবং তিনি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত কোথায় ছিলেন তাও জানান না, কোন শিক্ষকের সাথে মোবাইল ফোনেও কথা বলেন না। কিন্তু ২৩ অক্টোবর বুধবার হঠাৎ তিনি স্থানীয় ৫ নং গুপটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম কাজী, ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি মোবারক শেখ, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাহিম বেপারী, সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল মজুমদার, যুগ্ন আহবায়ক রেদওয়ান হোসেন রানা, উপজেলা বিএনপির সদস্য মনির পাটোয়ারী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আঃ কাদির সবুজ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ মিজি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহ্বায়ক আনোয়ার শেখ, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম হোসেন সহ আরো কয়েকজন বিএনপি নেতাকে নিয়ে তিনি কলেজে প্রবেশ করে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মোঃ রাসেল হোসেন, ওমর ফারুক নাহিদ, তাহমিদ হোসেন, মোঃ হাসিব কাজি, মেহেদী হাচান, আকলিমা আক্তার, আসমা আক্তার, বুসরা আকতার সহ আরো অনেকে উপরে উল্লেখিত অভিযোগগুলো আরো বিস্তারিত এই প্রতিনিধির কাছে প্রকাশ করেন। এবং তার বিরুদ্ধে উপরে উল্লেখিত অভিযোগগুলোর অনেক কিছুরই ভিডিও প্রমাণ সহ মোবাইলে রেকর্ড প্রমাণ আছে বলে তারা জানান। তারা আরো বলেন, অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের পদত্যাগের দাবিতে ইতিপূর্বে আমরা কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছি। এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলি মন্ডলের কাছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আমরা, এবং এলাকাবাসী ও কলেজের অন্যান্য শিক্ষকরা একাধিকবার নালিশ করি। কিন্তু মৌলি মণ্ডল অজ্ঞাত কারণে এর কোন সু ব্যবস্থা করে যান না। তারা আরো বলেন, হরিপদ দাসের বিরুদ্ধে আবার লাগাতার আন্দোলন শুরু করার চিন্তা ভাবনা আমাদের আছে।
অভিভাবকদের মধ্যে মোবারক হোসেন কালু, মোঃ জাকির হোসেন বাবলু, আবু তালেব চৌধুরী, কবির জমাদ্দার, আবুল কাশেম সবুজ, সুমন চৌধুরী, বাবু জমাদ্দার সহ আরো অনেকে বলেন, উপরে উল্লেখিত অভিযোগগুলো ছাড়াও হরিপদ দাসের বিরুদ্ধে এমন কিছু ঘটনা আছে যা উল্লেখ করলে অন্যান্য শিক্ষকদের অপমান বোধ হবে। তারা বলেন, হরিপদ দাসের নিয়োগটাই ছিল অবৈধ। তিনি শিক্ষক নামের কলঙ্ক! তাকে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বলতে খুবই লজ্জা বোধ করি। বিএনপি’র উল্লেখিত নেতারা কিভাবে বা কোন স্বার্থ তাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসালেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। তারা আরও বলেন অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের অনিয়ম গুলো আমরা বিদায়ী ইউ এন ও মলি মন্ডল কে অবহিত করেছিলাম, কিন্তু তিনি হরিপদ দাসের সাথে আঁতাত করার কারণে তার কোন সূরাহ হয় না। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসন এবং বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
স্থানীয় ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আল আমিন জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অত্র কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাস ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীর সাথে যে আচরণ করেছেন তাতে তাকে কোন রকমেই ছাড় দেওয়া যায় না। আমাদের অত্র অঞ্চলের সুনামধন্য এই কলেজটিকে হরিপদ দাস এবং তার ভাগিনা সজীব দত্ত নিজেদের মন মত পরিচালনা করতে গিয়ে কলেজটির সুনাম নষ্ট করা ছাড়াও এলাকার দুর্নাম করেছেন। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগগুলো যথার্থ। তাই গত ৫ আগস্ট থেকেই তিনি এলাকা থেকে নিরুদ্দেশ ছিলেন। বিষয়গুলো আমরা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে জানিয়েছি।
অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নিজের থেকেই কলেজে এসেছি। বিএনপি’র নেতা বা অন্য দলের নেতারা আমাকে নিয়ে এসেছে সেটা বলবো না। আমি জানি ওনারা আমাকে রিসিভ করতে এসেছে।
ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি সাইফুল ইসলামকে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ১ নং যুগ্ন আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শরীফ মোঃ ইউনূসের সাথে এই বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ হরিপদ দাস কোন অধ্যক্ষ নন তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি ওই কলেজে অধ্যক্ষের নামে আওয়ামী লীগের একজন সংগঠক ছিলেন। বিএনপি নামের যারা হরিপদ দাস কে রিসিভ করে কলেজে এনেছেন তারাও মূলত আওয়ামী লীগের দালাল।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, অধ্যক্ষ হরিপদ দাস গত ২৩ অক্টোবর তারিখে যোগদান করলেও অন ডিউটি দেখিয়ে তিনি রবি, সোম, মঙ্গলবারেও হাজিরা খাতায় সই করেন।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur