‘গর্তে ইঁদুর রেখে গর্ত ভরাট করে লাভ নেই’

সাইদুর রহমান সাইদুল:

ভূমিষ্ঠকালীন সময় থেকে বয়স পনের বছরের নীচে অবস্থানরত সন্তানকে শিশু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আজকের শিশু আগামী ভবিষ্যত। জাতি ও দেশের ভবিষ্যত খুঁটি। শিশুর সবচেয়ে এবং সর্বজনস্বীকৃত নিরাপদ আশ্রয়স্থল মায়ের শীতল কোল। সেই সর্বজনস্বীকৃতিপ্রাপ্ত জননীর কোলে শুধু রক্ত ঝরে না, রক্ত ঝরে মাতৃগর্ভের শিশুটির ।

পৃথিবীর আলো তার ভাগ্য জুটেনি। কৃত্রিম অক্সিজেন আর বাল্বের আলোতে শিশুটির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলো। পিস্তলের গুলি এত রক্ত পিপাসু হয়ে গেছে যে, মাতৃগর্ভ বিদীর্ণ করে তার রক্ত পিপাসা মিটিয়েছে। এ ভাবে রক্তস্নাত অস্ত্রের মহড়া কত দিন চলবে? আর কত শিশুর রক্ত দ্বারা পবিত্র ভূমি ধৌত করলে তাদের রক্তস্নান সম্পন্ন হবে ।

সিলেট থেকে ‘র’ দিয়ে (রাজন) কোমেনরা মহাপ্রলয়নকারী জলোচ্ছ্বাস তুললো শিশুটির উপর। রাজনের নির্যাতনের ভিডিও চিত্র দেখলে মনে হয়, অস্কার পাবার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, ধীর এবং ঠান্ডা মস্তিষ্ককে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছে। তারা নায়কের উপর পরিকল্পিত ভাবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট এ আঘাত করছে। ভয়ানক হিংস্র থাবায় নায়ক ভাষাহীনভাবে মৃত্যুপুরীতে চলে গেল। এ রকম নির্মম হত্যাকান্ড আধুনিক যুগে ঘটতে পারে তা অকল্পনীয়।

রাজনের হত্যাকান্ডের কিছুক্ষণ পর কোমেনদের দেহমন্ডল থেকে রাজনের রক্তের দাগ মুছে ফেলার জন্য মহাপরিকল্পনার জাল বিস্তার করে। কোমেনরা জালের বুনন কাজে পুলিশকে শক্ত সূতা মনে করলো। রাষ্ট্রের কাছ থেকে পুলিশ এত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার পরও তার স্বভাবসূলভ আচরণের ব্যতিক্রম কোন কিছু করল না। অথের্র কাছে বস্ত্র হরণ হল মানবতার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং দেশী-বিদেশি মিডিয়া গুলি করে হত্যাকারীদের ছবি প্রতি মুহূর্তে দেখাচ্ছে অথচ পুলিশ টাকার বিনিময়ে কোমেনদের বিদেশে পাঠানোর গ্যারান্টি কার্ড দিয়ে দিল।

পুলিশবাহিনীর সেবা এবং কর্মকান্ড সর্বমহল সমাদৃত না হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদান অনস্বীকার্য ও প্রমাণিত।

সারা বিশ্ব যখন জেনে গেল গোটা কয়েক পুলিশ বাংলাদেশের মানবতাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সিলেটের জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রশাসনকে রক্ত চক্ষু দেখালো। তখন সেই পুরোনা কাহিনী। পুলিশের বড় ভাইদের নিয়ে হল তদন্ত কমিটি। কি হল? সাময়িক বরখাস্ত। হত্যাকারীকে যদি হাজতে অথবা রিমান্ডে নিতে পারে, তাহলে দোষী পুলিশ কি আইনের ঊর্ধে? “অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে উভয়ই সমান অপরাধী ”।

অর্থ পুলিশকে বেসামাল করেছে ; কিন্তু এর প্রতিকার কোথায়? কিংবা এর শেষ কোথায়? আমরা সাম্যের গান গেয়ে অথবা জাদু-মন্ত্র দিয়ে এই কোমেনদের বীজ সমূলে নষ্ট করতে পারবো না। কোমেনরা থামলো না, রাজনের পর রাকিব, রবিউলকে নির্যাতন করে হত্যা করলো। এদের নিস্পাপ আত্মা হয়তো বা অভিশাপ দিচ্ছে না অথচ তাদের রক্ত আজ প্রতিবাদী করেছে জাতিকে। পত্রিকা অথবা মিডিয়ায় প্রচার করলে শিশু নির্যাতন একেবারে বন্ধ হবে না, তা প্রমাণ করলো রাকিব এবং রবিউলের নির্যাতন ।

শিশু নির্যাতনের সাথে শিশু শ্রমের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। তার জন্য দরকার সকলের সমন্বিত উদ্যোগ। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে শিশু শ্রম কেন বিক্রি হচ্ছে ?

শিশুশ্রম বিক্রি বন্ধ করতে হবে প্রথমে । নিম্নশ্রেণী ব্যতীত কোনো শ্রেণির পরিবার শিশু শ্রম বিক্রি করেন না। নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন বিশেষ ধরনের বিনোদন থেকে বঞ্চিত। একেক জনের আট থেকে দশ জন করে সন্তান আছে। ব্যক্তি বিশেষ আর বাড়তে পারে। অন্ধকার তাদেরকে পক্ষাগত করেছে । সভ্যতার আলো তাদেরকে আলোকিত করতে পারছে না। তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বলতে বেশী সন্তান জন্ম দেওয়া। তাদের সন্তানকে শিক্ষার আবহ সংগীত শুনাতে অনিহা প্রকাশ করছে। সন্তানের বয়স ৭/৮ বছর হলেও অর্থ আসবে। তারা স্রোতহীন নদীতে দূর্গন্ধময় মাছ খেতে চাচ্ছে। তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে, নিবিড় পর্যবেক্ষণেরর মাধ্যমে শিশু শ্রমের অপকারীতা বুঝাতে হবে। সাথে সাথে সরকারকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রচার-প্রচারণা জোরদার করতে হবে ।

প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায় শিশু নির্যাতন বিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। সুশিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ সরকাকে নিশ্চিত করতে হবে। যদিও বর্তমানে সরকারের আন্তরিকতার কোন অভাব দেখাচ্ছে না। তার প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যাবে, যখন প্রশাসন দুর্নীতি মুক্ত হবে। কারন “গর্তে ইঁদুর রেখে গর্ত ভরাট করে লাভ নেই”।

শিশু শ্রমের যারা সুবিধা নিচ্ছেন এবং যারা বিক্রি করছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

শিশু নির্যাতন বন্ধে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যদিও সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলকে শতভাগ সফল না। শিশু নির্যাতনের প্রতিষেধক হল শিশুশ্রম বন্ধ।

লেখক পরিচিত: সাবেক এজিএস, শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ ছাত্রসংসদ, নান্দাইল, ময়মনসিংহ।

চাঁদপুর টাইমস- ডিএইচ/2015

Share