গরু নিয়ে মহাবিপাকে ভারতীয় কৃষকরা

গরু নিয়ে মহাবিপাকে ভারতীয় কৃষকরা। গরুর মাংস নিয়ে বিতর্কসহ একাধিক রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার পর পথে বসার উপক্রম হয়েছে সেখানকার শত শত কৃষকের। তার ওপর বাংলাদেশে গরু রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় সমস্যা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে এই সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেন। গরু লালন-পালন থেকে শুরু করে গরুর দুধ ও গরু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা গরুর খামাররা এখন না খেয়ে থাকার যোগার হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে মোদির সরকারের বিরুদ্ধে।

রয়টার্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোবধ হিন্দুস্তানে ধর্মীয়ভাবে গর্হিত কাজ বলে বিবেচিত হওয়ায় অধিকাংশ রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটি বিশ্বের অন্যতম বড় গরুর মাংস রপ্তানিকারক।

বিজেপির সরকার মহারাষ্ট্রসহ কয়েকটি রাজ্যে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখতে গরু ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি করে এবং হামলা চালায় কতিপয় হিন্দু।

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনসংখ্যার বিশ্বাসের ওপর আঘাতের অভিযোগে নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এসব গোবধ নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর আইন জারি করে। ভারতের প্রায় ১৮ কোটি মুসলিমসহ অনেকে এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গরুর মাংসের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। এতে করে সারা দেশে কমে গেছে গরুর দাম। কমেছে মাংস রপ্তানিও। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসের মধ্যে দেশটির ১৩ শতাংশ মাংস রপ্তানি কমে গেছে। গরুর মাংস রপ্তানিকারী প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল এগিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ভারত। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে দেশটির কৃষক সম্প্রদায়ের ওপর। লাখো কৃষক জের টানা খরা ও অসময়ের বৃষ্টির কারণে ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। এ কারণে গবাদি পশুকে পর্যাপ্ত দানাপানি দিতে পারেননি। নিষেধাজ্ঞার কারণে গরু বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়েছে কৃষকদের। এতে তাঁরা শঙ্কিত।

রিভাজী চৌধুরী নামের একজন কৃষক মহারাষ্ট্রের একটি বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে এক জোড়া ষাঁড় বিক্রির চেষ্টা করছেন। ওই ষাঁড়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমি অবাক হয়ে ভাবি—সরকার কী চায়? আমাদের বেঁচে থাকা, না গরুর?’

মহারাষ্ট্রে বিজেপির বিধায়ক ভিমরাওধোন্দে রয়টার্সকে বলেন, কৃষকদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং যেখানে ইচ্ছা, সেখানে তাঁদের (কৃষক) গরু বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া উচিত। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এখন সময় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার।’

মহারাষ্ট্র রাজ্যে বিজেপির মুখপাত্র মধু চৌহান বলেন, ভিমরাওধোন্দের দৃষ্টিভঙ্গি দলের নয়। তিনি বলেন, ‘পার্টি মনে করে এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, খরার প্রভাব থেকে কৃষকদের মুক্ত করার জন্য যত বেশি অর্থের প্রয়োজন তা খরচ করা হবে।

লাখ লাখ গরু

মহারাষ্ট্রের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই। এই প্রদেশটি খরা আক্রান্ত একটি প্রদেশ। এই প্রদেশের একটি জেলায় সরকার আদেশ জারি করেছে যে, একটি পানির ট্যাংকের কাছে পাঁচজনের বেশি মানুষ যেতে পারবে না। দাঙ্গা প্রতিরোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গরু ও মহিষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭০ লিটার পানির প্রয়োজন। এ জন্য অনেক কৃষক কেবল তাঁদের গবাদিপশু পালন করা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

||আপডেট: ০১:৪৫  অপরাহ্ন, ৩০ মার্চ ২০১৬, বুধবার

চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর

Share