রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার দক্ষিণাঞ্চল নামে পরিচিতি। পৌরসভার কুশাবাড়িয়া, গোচর, হামিদকুড়া, জোতরঘু- এই চারটি গ্রামে তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। ভোটার সংখ্যা রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৪০০। মানুষের বসবাস প্রায় ৭ হাজার।
এই চার গ্রামের মানুষ ঈদে বাজার থেকে মাংস ক্রয় করেন না। তারা ছোট ছোট সমিতি গড়ে তুলেছেন। সাপ্তাহিক ৩০-৪০ টাকা সমিতির ম্যানেজারের কাছে জমা দেন। তবে এ সমিতির কোনো লাভ লোকসান নেই; যা টাকা জমা হয় সেই টাকার বিনিময়ে মাংস পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে গোচর গ্রামের ঈদ সমিতির ম্যানেজার শিরিন সুলতানা বলেন, আমাদের পরিবারের মধ্যে একটি সমিতি করেছি। সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। ৫০ সপ্তাহের মোট টাকা জমা হয়েছিল ৭৫ হাজার। এর মধ্যে ৫৫ হাজার টাকায় একটি গরু ও ২০ হাজার টাকায় একটি ছাগল ক্রয় করা হয়। সব মিলে ৫ কেজি গরুর মাংস ও দেড় কেজি খাসির মাংস পেয়েছি।
কুশাবাড়িয়া, গোচর, হামিদকুড়া, জোতরঘু- এই চারটি গ্রামে প্রায় ছোট-বড় মিলে অর্ধশতাধিক সমিতি রয়েছে। এ সমিতির অধীনে ৩৮টি গরু ও দুই শতাধিক খাসি ঈদের আগের দিন জবাই করা হয়।
এ বিষয়ে আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুজ্জামান শাহীদ বলেন, আমি জানি এই চারটি গ্রামের মানুষ গত কয়েক বছর থেকে ঈদ উপলক্ষে বাজার থেকে মাংস ক্রয় করেন না। তারা ছোট ছোট সমিতি তৈরি করে সাপ্তাহিকভাবে টাকা জমা করেন। এ টাকা দিয়ে ঈদের আগে গরু ও খাসি ক্রয় করে নিজ এলাকাতেই জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যারা দিনমজুরের কাজ করেন তারও সমিতির সদস্য হয়ে সপ্তাহ হিসেবে টাকা জমা দিয়ে এই ঈদে আত্মীয়স্বজন নিয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করেন।
গোচর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও একটি সমিতির সদস্য। প্রতি সপ্তাহে ৫০ টাকা করে ম্যানেজারের কাছে জমা দেই। সেই টাকা দিয়ে গরু ও খাসি ক্রয় করে নিয়ে ঈদের আগের দিন জবাই করে প্রায় ১২ কেজি মাংস পেয়েছি।
কুশাবাড়িয়া, গোচর, হামিদকুড়া, জোতরঘু গ্রামের সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২-১৩ বছর আগে এই চারটি গ্রামে হাতেগুনা এই ধরনের ২-১টি সমিতি চালু হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর সমিতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ বছর সমিতির সংখ্যার হিসাব নেই। তবে বাঘা উপজেলাজুড়ে চলছে এই সমিতি। এ সমিতিতে সাধারণত সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ৭৫ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারা প্রত্যেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা জমা দেন। পরে জমা করা টাকায় রমজানের ঈদের দুই-এক দিন আগে গরু বা ছাগল কিনে এনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেয়। তবে শুরুতে শুধু নিম্নবিত্তের লোকেরা এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যেও এ ধরনের সমিতি করার আগ্রহ বেড়েছে।
হামিদকুড়া গ্রামের সমিতির সদস্য গুড়ের আড়তের শ্রমিক লাল্টু হোসেন বলেন, ঈদের আগে ছেলেমেয়েদের কেনাকাটা করতে গিয়ে টাকা শেষ হয়ে যায়। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সমিতির সদস্য হওয়ার কারণে ঈদের আগে অনেক চাপ কমেছে। এতে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ঈদের আনন্দ বেড়ে যায়।
গোচর গ্রামের ভ্যানচালক সাহাদুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে ছেলেমেয়েদের চাহিদা পূরণ করে হাত খালি হয়ে যায়। সমিতির সদস্য হওয়ায় এবার ৮ কেজি মাংস পেয়েছেন। এ মাংস দিয়ে ঈদের দিন নিজেরা খাওয়া যায়, অতিথি আপ্যায়নও ভালো হয়।
এ বিষয়ে কুশাবাড়িয়া গ্রামের কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম, গোচর গ্রামের কাউন্সিলর নওশাদ আলী, হামিদকুড়া গ্রামের কাউন্সিলর আফতাব প্রামাণিক বলেন, চার গ্রামের গরিব বড়লোক নেই। সবাই সমিতির অধীনে সদস্য হয়েছেন। কয়েক বছর থেকে এই চার গ্রামের মানুষ ঈদে বাজার থেকে মাংস কিনেন না। এর ফলে এলাকার মানুষের যথেষ্ট ঐক্য তৈরি হয়েছে। তবে সমিতি এখন স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি বড়লোকদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বছরজুড়ে একটু একটু সঞ্চয় করে সদস্যরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন।