সকালে লক্ষীপুর বাজরে দোকান ভাংচুর, সন্ধ্যায় গণপিটুনিতে চেয়ারম্যান-নায়ক নিহত

চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষীপুর ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খান এবং তার বড় ছেলে নায়ক শান্ত খান জনতার হাতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। গতকাল ৫ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর সদর উপজেলার বাঘড়া বাজার লেবুতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে আজ ইউপি চেয়ারম্যান নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা সকালের দিকে লক্ষীপুর বাজরে ১১টি দোকান ভাঙচুর করেঅ

সূত্র জানায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নং লক্ষীপুর ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খান এবং তার বড় ছেলে নায়ক শান্ত খান বিকেলে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন থেকে মোটরসাইকেল যোগে সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নে পৌঁছালে জনতা রোশানলে পড়েন। এ সময় তিনি আত্মরক্ষায় কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েন বলে জানা যায়। এক পর্যায়ে জনতার গণধোলাইয়ে চেয়ারম্যান সেলিম খান এবং তার বড় ছেলে শান্ত খান নিহত হন। রাত দশটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের লাশ ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে শোনা যায়।

সেলিম খান চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল হাই কেরানীর ছেলে। তিন ভাই এর মধ্যে সেলিম খান সবার বড়ো। তিনি ছিলেন দুই কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তিনি বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এলাকার সূত্রে জানা যায় চেয়ারম্যান সেলিম খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজ গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নে একক আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনির একান্ত আস্থাভাজন লোক হিসেবে সেলিম খান এলাকায় ব্যাপক হারে জমি দখল ও মেঘনদীতে ৩ শতাধিক ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। দেশ বিদেশে তার একাধিক বাড়িসহ বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক তিনি। তার ছেলে নায়ক শান্ত খানের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হলে দুদক কর্তৃক তার সম্পদের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অবৈধ বালু উত্তোলন ও সরকারের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে তিনি গত বছর গ্রেফতার হন এবং ডা. দীপু মনি এমপির আনুকুল্যতা পেয়ে ছাড়াও পেয়ে যান। ছাড়া পেলেও তার সকল সম্পত্তির উপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি পুনরায় বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেন। এজন্য আইন আদালতের ফাঁক ফোকরে আবারও নদীতে বালু উত্তোলন করার চেষ্টা করলে নদী তীরবর্তী মানুষের বাধার মুখে পড়লে সরকার আর তাকে বালু উত্তোলনের অনুমোদন দেননি। ফলে তিনি আবারও অবৈধভাবে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই তিনি এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে চেষ্টা করেন।

তার বড়ো ছেলে নিহত শান্ত খান এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত। শান্ত খানের অত্যাচার থেকে এলাকার কোন মানুষই রেহাই পায়নি বলে জানা যায়। ভিন্ন মতের হলেই তার আর নিস্তার নেই। কেউ জমি দখলে বাধা দিলে তার আর রক্ষা নেই। শান্ত খান দলবল নিয়ে তার উপর হামলা করেন। ফলে এলাকাবাসী এই সেলিম খান বা তার ছেলের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেও পারেন না।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরকেও তিনি পাত্তা দিতেন না। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে তার অবস্থান ছিলো দাও-কুমড়ো। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে তার মারামারি হতো বলে জানা যায়।

সম্প্রতি পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে। কয়েক দফা মারামারিও হয় নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সাথে। বিগত কয়েক মাস তিনি স্থানীয় বহরিয়া বাজার ইউনিয়ন পরিষদেরও যেতে পারতেন না আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ভয়ে।

তবে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীসহ এলাকার অসহায় মানুষের উপর অনেক নির্যাতন নিপিড়ন করেন এবং তাদের সহায় সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেন বলে জানা যায়। এলাকাবাসী বলেন, ‘একেক সময় একেক কথা বলে তিনি জোর করে সবার জমিজমা দখল করে নেন। কখনো বলেছেন মেডিকেল কলেজ হবে আবার কখনো বলেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। অথচ মানুষের জমি জোর করে নিজ নামে বেনামে লিখে নিতেন তিনি। কারো জমির টাকা দিতেন কারো টাকা দিতেন না। এখনো মানুষ তার কাছ থেকে জমি ও কোটা কোটি জমির টাকা পাবেন বলে জানান এলাকাবাসী।

অভিযোগে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘এব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অনেক বিচার দিলেও মন্ত্রির আনুকুল্যতার কারণে তাকে কেউ কিছু বলতেন না এবং কিছু করতেও সাহস করতো না। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথেও সেলিম খান অনেক খারাপ ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। এছাড়া জেলা পরিষদ চেয়াম্যান আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারীও তাকে বার বার নিভৃত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেলিম খান কারো কথাই পাত্তা দিতেন না একমাত্র মন্ত্রির প্রভাবের কারণে।’

তবে তার শেষ পরিনতি যে এভাবে হবে তা এলাকার কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি। তবে কে বা কারা অন্য এলাকায় এভাবে হত্যা করলো তা এলাকাবাসী জানেন না। এলাকা সূত্রে জানা যায় তাকে তারা এলাকায় দেখেনি। সূত্র জানায় স্বার্থ হাসিল না হলে সেলিম চেয়ারম্যান শুধু এলাকায়ই নয় তার অত্যাচার থেকে জেলার কোন মানুষই রেহাই পেতো না।

প্রতিবেদক: এম. ফরিদুল ইসলাম, ৫ আগস্ট ২০২৪

Share