৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা শনির আখড়া এলাকায় এলাকায় ছাত্র-জনতা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত চাঁদপুরের জিহাদ হোসেনকে (১৮) যেন দেখার কেউ নেই। জিহাদ চাঁদপুর সদর শহরের ৭ নং ওয়ার্ড ক্লাব রোড এলাকার বাসিন্দা পিতা মুহাম্মদ সহীদ শেখ, মাতা জরিনা বেগম, বর্তমানে বাবুরহাট আশিকাটি এলাকায় বাড়া বাসায় থাকেন।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হয়। তার ডান পায়ে পুলিশে গুলি করলে আরেক পাশে দিয়ে দিয়ে বের হয়ে যায় গুলি। তখন সারা দেশ ছিল উত্তপ্ত জিহাদকে ঢাকার হাসপাতলে চিকিৎসা নিয়ে পরে দূরত্ব নিয়ে আসেন চাঁদপুরে তার পরিবার-পরিজন।
৬ই আগস্ট চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় জিহাদ । বর্তমানে তার যে দেখার কেউ নেই অসহায় পরিবারটি কাউর কোন সহযোগিতা পায়নি। এদিকে জিহাদের মা জরিনা বেগম জানান আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে ছোট ছেলে জিহাদের বাবা থেকেও নেই। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি । এরমধ্যে ছেলেটা ঢাকায় ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলি খেয়ে আহত হয় । আমার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। এই দুঃসময়ে কেউ পাশে না দাঁড়ানোয় চরম হতাশা প্রকাশ করছি ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে সংসার এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছেলেটা পঙ্গুর মতই। সরকার এবং কারো কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাইনি।
চিকিৎসার অভাবে বাড়িতে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল ছেলেটি কয়েক মাস ধরে। ডান পায়ে গুলি লাগে তার। অভাবের সংসারে হিমশিম খাচ্ছি। চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না ঠিকমত। যাইহোক বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হয়েছে। অনেক সময় ওষুধ কিনার মত টাকাও থাকে না এই অভাবের সংসারে।
গত ১৮ জুলাই ছাত্ররা আনন্দোন করতে থাকলে পুলিশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে এক পর্যায়ে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতে আহত হন।
গুলিবিদ্ধ জিহাদ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের গুলি আমার ডান পায়ে লাগলে প্রথমে মনে হলো, আমাকে কেউ ঢিল মেরেছে। সাথে সাথে সেই জায়গায় হাত দিলে রক্ত আর রক্ত দেখতে পাই । তারপর আমি অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।এক পর্যায়ে আমার সঙ্গে থাকা সহকর্মীরা হাসপাতালে না কি কোথায় নিয়ে যায় আমি জানিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার কয়েকদিন দিন পর টাকার অভাবে চাঁদপুরে নিয়ে আসে। ওখানে হাসপাতলে রোগীদের ঠাঁই নেই। পায়ের যন্ত্রণা বেড়ে গেলে চাঁদপুর হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করায়। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হলেও মাঝে মধ্যে খুব যন্ত্রণা বেড়ে যায়।’
‘শুনেছি হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন করেছি এবং ওই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে আহতদের সরকার অনেক সহযোগিতা দিয়েছে কিন্তু আমি পাইনি। এদিকে গুলিবিদ্ধ জিহাদ এর মা বলেন, আমার সন্তান যেদিন শুনলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে রয়েছে। সেদিন একজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চলে যাই। ডাক্তার বলেছেন তার দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা দরকার। ধার-দেনা করে যতদূর সম্ভব করেছি। এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে সহায়তা পাইনি। আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে আমি খুব কষ্টের জীবন যাপন করছি। মানুষের কাছ থেকে শুনে যাচ্ছি সরকার ছাত্র আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সহযোগিতা করেছে ।কিন্তু আমি তো পাইনি আমি সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। আমার স্বামী থেকেও নেই কারণ না থাকার মত তিনি শ্রমিক হলেও বর্তমানে কোনকর্ম করতে পারেনি। অসহায় সন্তানদের নিয়ে দিন যাপন করছি। আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
চাঁদপুর প্রতিনিধি, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur