জাতীয়

গডফাদারদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে জেলায় জেলায় দুদকের গোয়েন্দা কর্মকর্তা

গডফাদারদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে এবং তাঁদের আইনের আওতায় আনতে জেলায় জেলায় গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। আজ ৬ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দুদকের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (সজেকা) ২২ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাঁর কার্যালয়ের আওতাধীন প্রতিটি জেলায় কাজ করবেন। যাঁরা মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, খাসজমি দখল, ঘুষ-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থেকে গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তাঁদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে জমা দেবেন। কমিশন সেসব প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।

কমিশনের এমন সক্ষমতা আছে কি না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সক্ষমতা আমাদের আছে। সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কাজের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারই সক্ষমতার উৎস। আজকের কমিশন বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিশন, সচিব ও মহাপরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সবার দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই আমাদের সক্ষমতা সর্বাধিক বিকশিত করার চেষ্টা করছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, যাঁরা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করছেন, তাঁদের আইনি প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকালই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যিনি বা যাঁরা অবৈধভাবে ব্যাংকের বা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন, তা পাচার করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিঙ্গাপুরসহ আমাদের আশপাশের দেশগুলো থেকে আমরা কিছু কিছু তথ্য পাচ্ছি। কমিশনের প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যেই হংকংয়ের আদালতের সহায়তায় কিছু অবৈধ অর্থ জব্দ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমেই সর্বাধিক অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে দুদক কার্যালয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় এ জাতীয় অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ডে কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন
দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য একটি ডে কেয়ার সেন্টারের উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এ সময় সংস্থাটির দুই কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও মো. মোজাম্মেল হক খান, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্তসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ডে কেয়ার সেন্টার চালু করার মাধ্যমে আমাদের নারী কর্মকর্তারা আরও নিশ্চিন্ত মনে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মায়েরা এখন অনেকেই চাকরি করছেন। নারীরা এখন আর ঘরে বসে শুধু সন্তান পালনই করছেন না, বরং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁরা চাকরি করছেন। দুদকেও অনেক নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। আবার অনেক পুরুষ কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁদের স্ত্রী চাকরি করেন। তাঁদের সন্তানদের পরিপালনের বিষয়টি একটি উদ্বেগের কারণ। কমিশন তাঁদের উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়েছে। কমিশনের কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করার জন্যই এই ডে কেয়ার সেন্টারটি চালু করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন।’

দুদকের এই কার্যক্রম দেখে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে আরও সক্রিয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দুদকে যেসব নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাঁরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রেপ্তার, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও তাঁরা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। দুর্নীতি দমনে তাঁদের দৃঢ় মানসিকতা রয়েছে। তাঁদের শিশুদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করায় তাঁদের কাজের মান ও পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। শিশুরা এখানে খেলাধুলা করতে পারবে এবং আনন্দের সঙ্গে কিছু শিখতেও পারবে।’

ঢাকা ব্যুরো চীফ , ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Share