আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে একটি চক্র কারসাজি করছে।
সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে দাম। খুচরা বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বোতলজাত সয়াবিন এক প্রকার উধাও হয়ে গেছে।
অনেকেই না পেয়ে বাড়তি দরে খোলা তেল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতাদের আবারও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বেলা ১১টায় রাজধানীর কেরানীগঞ্জের জিনজিরা কাঁচাবাজার ঘুরে ২ ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন পাওয়া যায়নি। প্রায় ১০ থেকে ১২টি দোকান ঘুরে এক লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ক্রেতারা তেল না পেয়ে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন। বাজারে প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় পাওয়া গেলেও খোলা তেল ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর নয়াবাজারে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে ২ ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পুরোপুরি উধাও। এক লিটারের পাওয়া গেলেও খুব কম, নেই বললেই চলে। প্রতি লিটার ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে খোলা তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি লিটার ২০০ টাকা।
এদিকে দুপুর ২টার দিকে মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে বোতলজাত সয়াবিনের তীব্র সংকট দেখা গেছে। জিনজিরা বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. লিয়াকত বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। সামান্য যা আছে বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। এছাড়া খোলা তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটারে। দেখার যেন কেউ নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে দেশেও তার প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করতে হবে। যদি দাম বাড়াতে হয় তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় আর কিভাবে সহায়তা দেওয়া যায় তা পর্যালোচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে।
জিনজিরা কাঁচাবাজারে মুদি দোকানি সাক্কুর আলম বলেন, হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি তেল সরবরাহ করে। তারা আবারও দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ১৫ কার্টন অর্ডার করলে ১-২ কার্টন তেল সরবরাহ করছে। পাঁচ লিটার ও দুই লিটার তেল দিচ্ছে না।
পাশাপাশি খোলা তেল দফায় দফায় দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে আবারও তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো কিছুর দাম বাড়লেই আমদানিকারকরা দেশের বাজারে সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমালে কমায় না। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তি তখন দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে তিন পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের সুবিধা দিয়েছে সরকার। যা ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কিন্তু ইতোমধ্যে আমদানিকারকরা আবারও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়াতে চাচ্ছে। তারা এখন যে তেল কিনছে দেশের বাজারে আসতে আরও তিন থেকে চার মাস লেগে যাবে। কিন্তু আমদানিকারকরা এখনই দাম বাড়াতে চাচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না দেওয়ায় বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে তেলের দাম ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতায় রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও অসাধু চক্র থেমে নেই। সরকারের নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছে না। পাশাপাশি নতুন করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। ইতোমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। অধিদপ্তর সে আবেদন আমলে না নিয়ে ঈদের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দাম বাড়াতে চিঠি দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে-আমদানি করা তেলের দাম কত হবে, তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ঈদের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সার্বিক তদারকি করছি। কয়েকদিন পর পর কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের তলব করছি।
তেল আমদানি, সরবরাহ খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, আবার কেন ও কারা দাম বাড়াল তা খতিয়ে দেখতে তদারকি শুরু হয়েছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে তেল কোম্পানির প্রতিনিধিদের আবারও ডাকা হবে।